জুয়েল চৌধুরী/সজিব ইসলাম ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামে এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহমিনা খাতুন (১৬) নামে এক কিশোরীর উপর এসিড নিক্ষেপ করার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আনসার সদস্য সারাজ মিয়া (৩৫) কে আটক করা হয়েছে। সে ওই গ্রামের আতাব উল্লাহর পুত্র। গতকাল শুক্রবার সকালে সদর ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। জানা যায়, গত বুধবার গভীররাতে ওই গ্রামের মৃত আছকির মিয়ার কন্যা তেলিখাল হাই স্কুলের ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহমিনাকে কে বা কারা ঘুমন্তব অস্থায় এসিড নিক্ষেপ করে। এতে তার পুরো মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ঘুমন্ত ওই ছাত্রীকে কে বা কারা এসিড নিক্ষেপ করেছে তার পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানাতে না পারায় বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার সুতাং ঘোড়াবই এলাকা থেকে সারাজ মিয়া কে আটক করে। সারাজ চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলী এলাকায় আনসার বাহিনীতে কর্মরত আছে। উল্লেখ্য এসিড নিক্ষেপের বিষয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিক কোন মন্তব্য না করলেও সন্দেহভাজন হিসেবে সারাজ মিয়াকে আটক করায় নানান প্রশ্ন জনসম্মুখে আসতে শুরু করেছে। থানায় আটক সারাজ মিয়া সাংবাদিকদের জানায়, এসিড আক্রান্ত ছাত্রী তার আপন মামাতো বোন। ওই ছাত্রীর চাচা সফিকুল ইসলাম, চাচাতো ভাই তৈয়ব আলী, এমরান মিয়া, আকরাম আলী, নজরুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামের সারাজ মিয়া ও তার পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষে মামলা মোকদ্দমাও চলছে। ঘটনার রাতে সারাজ বাড়িতে ছিল না। গতকাল শুক্রবার বাড়িতে এসে পারিবারিক কাজে সুতাং বাজারে যাওয়া মুহুর্তে পুলিশ তাকে আটক করে। সে জানায়, এসিড নিক্ষেপের ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। আমার ধারণা, এসিড আক্রান্ত তাহমিনার চাচার পরিবারের সাথে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ থাকার কারণে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি যদি এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকি, এসিড মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি আমার যেন মৃত্যুদন্ড হয়। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি এসিড আক্রান্ত তাহমিনার পিতা আছকির মিয়া মারা যাবার পর থেকে তার পরিবার অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে থাকে। এ সুযোগে সিলেটের জনৈক হাবিব নামের এক যুবক তাহমিনার মাকে ধর্ম মা ডেকে বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে। স্থানীয়রা জানান, ওই যুবক তাহমিনাকে বিয়েরও প্রস্থাব দেয়। কিন্তু তাহমিনার পরিবার এতে অসম্মতি জানালে তাদের মধ্যে মনোমালিণ্য সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের ধারণা এ ঘটনার জের ধরেও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে থানায় আটককৃত সারাজের সর্ম্পকে এলাকাবাসির কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত সারাজের পরিবার ও তাহমিনার চাচাদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। সে দীর্ঘদিন যাবত আনসার সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত আছে। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে কে এ ঘটনা ঘটিয়েছে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না আক্রান্তের পরিবার। এব্যাপারে ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, এসিড আক্রান্তের পরিবারের অভিযোগে সারাজকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আজ শনিবার তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হবে। এদিকে এসিড আক্রান্ত ছাত্রী তাহমিনা ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।