সেলিম তালুকদার ॥ উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রজত রায়ের পবিত্র কাবা শরীফ অবমাননা করে ব্যঙ্গচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আপলোড করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকটি বাড়ি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বিজিবি, র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে গ্রেফতারকৃত রজতকে সোমবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১ টার দিকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে থেমে থেমে কয়েকটি মিছিল নিয়ে হাজার বিক্ষোব্ধ জনতা রজত রায়ের ফাঁসি দাবী করে ইনাতগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে। এক পর্যায়ে মিছিলটি মধ্যসমেত গ্রামের রজত রায়ের বাড়ীর দিকে গিয়ে ওই গ্রামের ৪টি বাড়ীতে ঢিল ছুড়ে। এতে অভিজিৎ রায়, সঞ্জয় রায়, শুভাষ রায়, গোবিন্দ রায় এর বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দুপুর দেড়টার দিকে বিক্ষোব্ধ জনতাদের নিয়ে স্থানীয় হাই স্কুল মাঠে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা সভা করেন। এতে বক্তব্য রাখেন, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পুলিশ সুপার জয় দেব কুমার ভদ্র, বিজিবির লেঃ কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উপ-সচিব) সফিউল আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার। উসস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র কুমার নাথ, সিনিয়র পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমান, থানার ওসি এস.এম আতাউর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বজলুর রশীদ, মুহিবুর রহমান হারুন, সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদী, আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান, ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল ইসলাম (ইলাক), কাউন্সিলর জাকির হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ আমিনুর রহমান সুমন, ইনাতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য জামাল হোসেন, জসিম উদ্দিন, হাফিজ উদ্দিন প্রমুখ। এসময় বিক্ষোভকারীরা মিছিলে ঢিল নিক্ষেপকারী নারায়নের গ্রেফতারের দাবী জানান। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের উদ্যোশে বলেন, অপরাধী যেউ হোক, আইনের উর্ধ্বে কেউ না। ঘটনার পরপরই দোষী রজত রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং প্রচলিত আইনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এ ব্যাপারে তিনি বিক্ষোভ কারীদের আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, অপরাধ করেছে একজন তার শাস্তি হবে নিশ্চিত কিন্তু আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অপরাধী হবেন না। এসময় বিক্ষোভ কারীরা প্রচলিত আইনে দোষী রজতের শাস্তি না দিয়ে তাকে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে তার বিচারের দাবী জানান। ফেইসবুকে পোষ্টের পর জনতা বিক্ষোভ মিছিল করার খবর পেয়ে রজত রায়কে রবিবার বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই নবীগঞ্জ থানার এস আই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। থানার ওসি এস.এম আতাউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত রজত স্বীকারোক্তি দেয়ায় গতকাল সোমবার সকালে রিমান্ড আবেদন না করেই আদালতের মাধ্যমে রজতকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। অপর দিকে ইনাতগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইনাতগঞ্জ বাজার ও আশ পাশ এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন র‌্যাব, ৫০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তৎপর রয়েছেন। তারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে এবং হিন্দু বাড়ি ঘরের আশ পাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। এছাড়াও ধৃত রজতের ফাঁসির দাবীতে নবীগঞ্জ উপজেলা সদর, কাজির বাজার, বড় ভাকৈরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃংখলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম বলেন, অপরাধীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শাস্ত রয়েছে এবং আইশৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এদিকে কাজীগঞ্জ বাজার ও ইনাতগঞ্জে মানব বন্ধনে মোঃ ছাদিকুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কাজির বাজার দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা আঃ বারী, সহকারী শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী, ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ, সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ জিহাদী, আওয়ামীলীগ নেতা আজিজুর রহমান, ২নং ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লা মিয়া, কাজির বাজার দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আঃ রহিম, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আজমল হোসেন, ২নং ইউপি যুবসংহতি নেতা আবু ছালেহ, তালামীয নেতা ছাইদুর রহমান, কৃষকলীগ নেতা শাহাব উদ্দীন, এমরান চৌধুরী, হাফিজ জাকারীয়, ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী, মাওলানা জোনাইন ইসলাম প্রমূখ। অপরদিকে নবীগঞ্জ শহরে নতুন বাজার মোড়ে দুপুর ২ ঘটিকায় রজত রায়ের সর্বচ্চো শাস্থির দাবীতে বাংলাাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার মানব বন্ধন শান্তি পূর্নভাবে সমাপ্ত হয়েছে। উপজেলা সভাপতি মাওঃ এম এ ছবুরের সভাপতিত্বে মানব বন্ধনে প্রধান মেহমান ছিলেন কেন্দ্রিয় আল ইসলাহের সহ প্রচার সম্পাদক কাজী এম হাসান আলী। বক্তব্য রাখেন আব্দুল মুহিত রাসেল মাওঃ আবদুর রকিব হক্কানী, হাফিজ রুহুল আমীন চৌধুরী, মোঃ সাইদুর রহমান মাওঃ শিহাব আহমদ, বিশ্ব সংবাদ পত্র এজেন্ট ও নোয়াপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মোঃ মোশাহিদ আলী প্রমূখ।