জসিম উদ্দিন ॥ আবারো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের ৮/১০টি গ্রাম। এতে প্রায় কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীর পাড় ডুবে ও দীঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করে কয়েকশ বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল, মাদ্রাসা, দোকান, আউশ ধান, বিভিন্ন জাতের সবজিতে, পুকুর ও মাছের ফিশারি (ঘের) তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাৎক্ষনিকভাবে বেড়ি বাধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অপদিকে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ের দক্ষিণ গ্রাম, নাদামপুর ও পাঠানহাটি গ্রামগুলির প্রায় শতাধিক পরিবার একই অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কুশিয়ারা নদীতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নড়খাই নদী দিয়ে ঢোকে গত ২ দিন ধরে উল্লেখিত দুটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত করে। অন্যদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ কুশিয়ারা ডাইক এর বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। যে কোন সময় কুশিয়ারার ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ও হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশের বৃহত্তম গ্যাস কুপ বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড ও বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট। যে কোন সময় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় এলাকার লোকজন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীঘলবাক বাজারের প্রায় শতাধীক দোকান পানি বন্দী অবস্থায় আছে। অনেক বাড়ী ঘরে পানি উঠায় ঘরে তালা ঝুলিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন অনেক পরিবার। দীঘলবাক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলজার মিয়া বলেন, বর্ষার মৌসুমে আমাদের শতাধীক দোকান পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ১/২ মাস দোকান বন্ধ রাখতে হয়। অনেক ব্যবসায়ীর পরিবার না খেয়ে বাচঁতে হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিন মিয়া বলেন, দীঘলবাক এলকার প্রায় ৮০% ঘর বাড়ী পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কুশিয়ারার পানি বিপদ সীমার উপর প্রবাহিত হওয়ায় অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসময় অনেকেই কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, অকাল বন্যায় আমরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি, কিন্তু কোন চেয়ারম্যান, মেম্বার অথবা জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাইনি। দূর্গতরা অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন, কেহ কেহ ঘরবাড়ী ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সরজমিন পরির্দশন কালে দেখা মিলে এক বাড়ির, ঘরের ভিতরে থেকেই সবজি কাটছেন আছিয়া বেগম নামের এক মহিলা, তিনি বলেন, পানির কারণে ঘর থেকে বের হতে পারি না। বাজার হাটে যেতে পারিনা তাই ঘরে বসেই সব কিছূ করতে হয়। এর পর দেখা যায় শেখ আব্দুল আছাদের বাড়ি। বাড়িতে দুটি ঘর রয়েছে এর মধ্যে দুটিতেই হাটু পানি ঘরের ভিতরেও। অনেকটা আতংকের মধ্যে দিন রাত কাটাচ্ছেন তারা। দিন যায় যেমন তেমন রাত হলেই বেড়ে যায় সাপ সহ বিভিন্ন আতংক। আছাদ জানালেন, তারা ২ দিন যাবত এ অবস্থায় রয়েছেন। তাদের পরিবারে ১০ সদস্য, সবাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সব সময়ই খাটের এর উপর থাকতে হচ্ছে তাদের। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তারা। এলাকার বাসিন্দা সাহিত্যিক নিলুফা আক্তার নিলু জানান, কুশিয়ারার পানি বিপদ সীমার উপর অতিবাহিত হয়ে হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। দীঘলবাক ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এয়লা মিয়া বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় দীঘলবাকের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডাইকের বাহিরের গ্রামগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে দীঘলবাক বিলিন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আগে কেউ জানায়নি, তাই জানতাম না। সংবাদ লিখার সময় বলেন তিনি আমি কিছুক্ষন আগে জেনেছি এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।