,

নানা সংকটে দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়েছে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার : নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ। ভবনবিহীন কার্যক্রম, ক্লাস সংকট, পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষকের অভাব ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনসহ নানা সংকটে দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থা। অপরদিকে একমাত্র আধুনিক হাসপাতালের ভবনে দীর্ঘদিন কার্যক্রম চালানোর ফলে দেখা দিয়েছে রোগীদের সিট সংকট। এসব সমস্যায় দিন দিন বিনষ্ট হয়ে পড়ছে কলেজের শিক্ষার মান। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্র্যাকটিসের সুযোগ না থাকায় ভালো চিকিৎসক তৈরিতেও রয়েছে সংকট।
সূত্র মতে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল ভবনের দুটি কক্ষে শুরু হয় শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এরপর থেকে অদ্যাবধি নিজস্ব কোনো ভবন কিংবা জায়গার ব্যবস্থা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অনেকটা খুঁড়িয়েই চলছে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম।
মেডিকেল কলেজে ৯৬ জন শিক্ষকের মধ্যে আছেন ৫৩ জন। তাদের অনেকেই আবার নিয়মিত নন। ইদানীং কয়েকজন অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। অন্তত ৮টি ক্লাসরুম থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪টি। যে কারণে বাধ্য হয়েই অনেক সময় দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। এ ছাড়া এবার নতুন ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় আরও বেশি বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।
যেখানে পুরোনো ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে আবার নতুন করে ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ছাত্রীদের হোস্টেলের ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ভাড়া থাকতে হচ্ছে, ফলে তাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নেই কোনো ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ ও শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার তামান্না বলেন, আমাদের সংকটের সীমা নেই। সেগুলো বলে শেষ করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, ক্লাসরুম ও নানামুখী সংকট রয়েছে। ক্লাসরুমের অভাবে আমাদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়, কখন অপর ক্লাস শেষ হবে- এরপর আমরা ক্লাসে যাব।
কলেজের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মিহাল তাহমীদ জানান, আমরা এখন শেষ পর্যায়ের ছাত্র কিন্তু ক্লাসরুমের অভাবে অন্য ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কখন তাদের ক্লাস শেষ হবে, এরপর আমরা সেখানে গিয়ে ক্লাস করব। ক্যাম্পাসের অভাবে আমরা ইচ্ছে করলেও খেলাধুলা করতে পারি না। কবে যে ক্যাম্পাস ও নিজেস্ব ভবন পাব বলা যায় না। নামে মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিন্তু সমস্যার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা এর থেকে উত্তরণ চাই।
একই কলেজের অন্য শিক্ষার্থী জীবন রবি দাশ জানান, মেডিকেল কলেজের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সমস্যা আর সমস্যা। সমস্যার মধ্য দিয়েই কষ্ট করে ক্লাস করতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষক নেই। শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হচ্ছে না। কাউকে বলতেও পারছি না।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুনির্মল রায় জানান, আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে জায়গা নির্ধারণ। এখন পর্যন্ত জায়গা নির্ধারণ করতে না পারায় কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পটি একনেকে ওঠানোর জন্য। আমাদের শিক্ষক সংকট, আবাসন সংকট, শিক্ষকদের ক্লাসরুমে বসার জায়গা নেই, ক্লাসরুমের অভাবে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে অন্তত ১৫টি বিল্ডিংয়ের দরকার হয় কিন্তু এখনো আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারিনি। আমাদের এখনো ৪০ শতাংশ শিক্ষক নেই, নেই কোনো টেকনোলজিক্যাল ব্যবস্থা। ভালো ল্যাব নেই যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রাকটিস করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ফরেনসিক বিভাগ, কমিউনিটি মেডিসিনসহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক নেই। অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষক সংকট রয়েছে। যারা ইন্টার্ন করছে তাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। কারণ তাদের রেজিস্ট্রার প্রয়োজন কিন্তু নেই। নেই কোনো ইন্টার্নদের হোস্টেল।
দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান করে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানান কলেজটির অধ্যক্ষ সুনির্মল রায়।


     এই বিভাগের আরো খবর