,

টানাটানিতে ম্লান ঈদ

রিপন দেব ॥ কালো মেঘে আকাশ ঢাকা। মানুষের মুখে হাসি নেই। আগাম বন্যা গিলে খেয়েছে ফসল। হাওরে হাওরে বইছে কান্না। দুঃখ নিয়ে তাদের পথচলা। নিত্যদিনের খাবার যোগাতেই তাদের ত্রাহি অবস্থা। অন্যদিকে সেই রেশ কাটতে না কাটতেই অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশে চলছে স্বাভাবিক বন্যা। অন্যদিকে চালের বাজার পুড়ছে দামের আগুনে। নিম্ন আয়ের মানুষজনের ঘরে হাহাকার। তিনবেলা ভাত খেয়ে যাদের অভ্যাস চালের দামের ঊর্ধ্বগতি তাদের গতিকেই থামিয়ে দিয়েছে হঠাৎ করে। এর ধাক্কা লেগেছে সর্বত্র। এ অবস্থায় এসেছে ঈদ। নিত্য সংসার চালাতে যাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের আবার ঈদ কিসের? তারপরও বছর শেষে আসা ঈদ বলে কথা। নতুন পোশাক কেনা, ঘর গোছানো, নাড়ির টানে ঘরে ফেরা। সবকিছুই করতে হচ্ছে কষ্ট করে। তাই আসন্ন ঈদকে টানাটানির ঈদ আখ্যা দিয়েছে সাধারণ মানুষ। গতকাল নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে তাদের মধ্যে এবারের ঈদে আনন্দের চেয়ে হতাশাই বেশি। নবীগঞ্জ উপজেলার গুঙ্গিয়াজুরি হাওরপাড়ের বাসিন্দা কৃষক রমজান মিয়া। হাওরে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তার সারা বছরের খোরাক। কৃষি নির্ভর রমজান মিয়ার স্ত্রী-সন্তানসহ ছয় জনের সংসার। কিন্তু হাওর সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার পর চোখে দেখছিলেন গাঢ় অন্ধকার। রমজান মিয়া জানান, ঈদ আসছে। কিন্তু এবছর ঈদের কোন আনন্দ তিনি খোঁজে পাচ্ছেন না। প্রতি বছর ঈদ আসলে স্ত্রী সন্তানের জন্য ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার কাপড় কিনেন। এছাড়া আরো ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার অন্য বাজার কিনেন। কিন্তু এবছর পরিবারের জন্য কোনো কাপড় কিনতে পারবেন না। বাড়িতে ছেলে-মেয়েরা শুধু জিজ্ঞেস করছে কবে তাদের জন্য নতুন কাপড় নিয়ে যাবে। কিন্তু তিনি তখন চুপ করে থাকেন। কোন উপায় খোঁজে তিনি পাচ্ছেন না। কাপড় কিনলে অন্য বাজার করা হবে না। রমজান জানান, এ বছরই বাচ্চাদের কোনো কাপড় না দিয়ে ঈদ করতে হবে। ধান চাষ করার সময় কিছু টাকা ধার করে এনেছিলাম। সেই টাকাও এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারিনি না। পাওনাদাররা বাড়িতে এসে বসে থাকে। রিকশা চালক, ভ্যান চালক, গাড়িচালক, শ্রমিক, দিনমজুররা পোশাক কেনার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ঈদে সবাই কম-বেশি কাপড় কিনেন। কিন্তু এই ঈদে তেমন কোনো উল্লাস মানুষের মধ্যে নাই। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলে, সংসার চালাতেই পারছি না, আবার ঈদ! এই ঈদ আনন্দের নয়, টানাটানির।


Comments are closed.

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.