,

নবীগঞ্জে ডেবনা নদীর চর দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা বন্দোবস্ত নেয়া ভূমিতে ঘর নির্মাণ করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার তাহিরপুর মাদ্রাসা হয়ে আউশকান্দি ডেবনা ব্রীজ পর্যন্ত নবীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ডেবনা নদীর খাল মরা খালে পরিনত হয়। সময়ের ব্যবধানে ডেবনা নদীর খালটি ক্রমেই পলি ও বালিমাটি জমে নবীগঞ্জ উপজেলার খরস্রোতা খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যথা সময়মতো নদী খাল ড্রেজিং না হওয়ায় এক সময় উপজেলাবাসীর আর্শিবাদ হলেও বর্তমানে খালটি ভরাট হয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। কুর্শি থেকে তাহিরপুর মাদ্রাসা পযর্ন্ত নদীর চর দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এলাকার দুই প্রভাবশালী নেতা। ওই এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে চলছে ডেবনা দখল প্রতিযোগীতা। তারা নদীর চরে গাছ লাগিয়ে কিংবা কুড়ে ঘর তৈরি করে একের পর এক দখলে ব্যস্ত রয়েছেন। দখল নিয়ন্ত্রনে নেয়ার পর এলাকার বিভিন্ন লোকদের কাছে উচ্চ হারে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই ভূমি খেকোরা হচ্ছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে ভূমি ও রাজস্ব। জানা যায়, ২০০০ সালে ৫৯নং দাগের কিছু ভূমি উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের মৃতঃ মজুমদার মিয়ার পুত্র হোসিয়ার মিয়া ও তার স্ত্রী আরফুন বিরি নামে বন্দোবস্তু দেয় সরকার। হোসিয়ার মিয়া ওই ভূমিতে ঘর নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দেন। এর পর থেকে শুরু হয় অবৈধভাবে ডেবনা নদীর চর দখল। এলাকার আওয়ামীলীগ ও জামাত নেতা চর দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠে একটি দখলবাজচক্র। অবৈধভাবে দখল করা ভূমির উপর গড়ে উঠেছে বাজার। তাহিরপুর মাদ্রাসা বাজার ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা উত্তরে জানান ওই ভূমি বন্দোবস্ত নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। মূলতঃ ওই বাজারের ভূমি হোসিয়ার মিয়া ও তার স্ত্রী আরফুল বিবি ব্যতিত কাউকে বন্দোবস্ত দেয়নি সরকার। এদিকে গত ১৬ মার্চ রাইয়াপুর গ্রামের আশিকুল মিয়া নামের এক ব্যক্তি ডেবনা নদীর চর দখল করে ঘর নিমার্ণ প্রসঙ্গে একটি আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। আবেদনে উল্লেখ করা হয় তাহিরপুর গ্রামের ফারুক মিয়া, রাইয়াপুর গ্রামের দুলা মিয়া, সাদুল্লাপুর গ্রামের সেজলু মিয়া অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করেছেন। আবেদনের খবরটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হলে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট কাওছার আলম এর নজরে আসে। আদালত তাৎক্ষনিকভাবে নদী দখল করে বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নবীগঞ্জ থানার ওসিকে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। এর পর আদালতের নির্দেশে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। এ ব্যাপারে অভিযুক্তরা জানান যে, ভূমির উপর তারা ঘর নির্মাণ করেছেন ওই ভূমি খাস খতিয়ানের নয়। ৫৯নং দাগের ওই ভূমি ২২০/১৯৯৯-২০০০ইং নং স্থায়ী বন্দোস্ত মামলায় কল্যাণপুর গ্রামের মৃত মজুমধর মিয়ার পুত্র হোসিয়ার মিয়া ও হোসিয়ার মিয়ার স্ত্রী আরফুল বিবি’র নামে দেয়া আছে। ওই ভূমি ৫৩নং জেএলস্থিত সাদাল্লাপুর মৌজার এসএ ৫৯৬নং দাগে নদী শ্রেনীতে ৩.২৬ একর ভূমি বিগত এসএ জরিপে রেকর্ডভূক্ত হয়েছে। পরবতীতে ০৪/২০০০ইং শ্রেণী পরিবর্তন মামলার মামলার প্রেক্ষিতে ৫৯৬নং দাগের ১ একর ভূমি নদী শ্রেণী থেকে লায়েক পতিত শ্রেণীতে পরিবর্তন করা হয়েছে। উক্ত ৫৯৬নং দাগের ভূমি ০৯/২০১৪-১৫নং স্থায়ী বন্দোবস্ত মামলায় কল্যাণপুরের বাসিন্দা মৃত কাজী মজুমধর মিয়ার পুত্র কাজী কলমদর মিয়া ও তার স্ত্রী রুপতেরা বিবি’র নামে বন্দোবস্তু দেয়া হয়। বন্দোবস্ত ভূমিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে ঘর নিমার্ণ করে ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করে আসছেন। তারা আরও জানান, নবীগঞ্জ থানা তাদের বিরুদ্ধে বিনা নোটিশে মামলা রুজু করেছেন। খবর পেয়ে মামলার আসামী ফারুক মিয়া গত ৮ জুন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর খাস খতিয়ান ঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন তারা যদি অবৈধভাবে ওই ভূমির উপর দোকানঘর নির্মাণ করেন তবে ডেবনা নদীর তীরে তাহিরপুর মাদ্রাসা বাজারের ২০ থেকে ২৫টি দোকানঘরের মালিকও অবৈধ বলে গণ্য হবে। যদি তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলের অভিযোগ আনা হয় তবে অন্যান্য দোকানঘর মালিকদের বিরুদ্ধেও আইগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। আবেদনে ফারুক মিয়া আরও উল্লেখ করেন তাহিরপুর গ্রামের মৃত এলাছ মিয়ার পুত্র আবু তায়েদ, মৃত হরমুজ উল্লাহর পুত্র লোকমান মিয়া, মৃত কদ্দুছ মিয়ার পুত্র আশিক মিয়া, মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র রোহিত মিয়া, মৃত এলাইছ মিয়ার পুত্র নফিছ মিয়া, মৃত মছিদ উল্লাহর পুত্র আকল মিয়া, মৃত ছাবু মিয়ার পুত্র তাজুল ইসলাম, আলফাছ মিয়ার পুত্র আব্দুল হক, মৃত সুন্দর আলীর পুত্র কদ্দুছ আলী, মৃত ইসমাইল চৌধুরীর পুত্র আব্দুল আহাদ চৌধুরী, মৃত এলাইছ মিয়ার পুত্র জামাল মিয়া, মৃত কাচা মিয়ার পুত্র দবির মিয়া, হাজী ওয়াছিউর রহমানের পুত্র রফিক মিয়া, আলফাছ মিয়ার পুত্র আব্দুল হাই, মৃত ওয়াহাব উল্লাহর পুত্র মাসুক মিয়া, মৃত ছাবু মিয়ার পুত্র কাছন মিয়া, মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র হারুন মিয়া, কল্যাণপুর গ্রামের মৃত মামদ মিয়ার পুত্র নুর মিয়া ও ফজলু মিয়া। বুরহানপুর গ্রামের আকলি মিয়ার পুত্র জুয়েল মিয়া, রাইয়াপুর গ্রামের ছল্লুক মিয়ার পুত্র খয়রুল হোসেন, ঘোলডুবা গ্রামের মোছাব্বির মিয়া, সাদুল্লাপুর গ্রামের মৃত আতিকুল্লাহর পুত্র জিলু মিয়া খাস খতিয়ানে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অপরদিকে নবীগঞ্জের আউশকান্দি-শেরপুর রোডের ডেবনা নদীর ব্রীজের নীচে নদী দখল করে টিনসেড ঘর নির্মাণ করেছেন আউশকান্দি ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও বিএনপি নেতা উস্তার মিয়া। এ বিষয়ে উস্তার মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমার নিজেস্ব জায়গার উপরে ঘর নির্মাণ করেছি এবং রাস্তার উপরে আমার জায়গা রয়েছে। এছাড়া রায়পুর গ্রামের লোকজন ডেবনা ব্রীজ সংলগ্ন টং দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। উল্লেখ্য, উপজেলার তাহিরপুর মাদ্রাসা বাজার ব্রীজ সংলগ্ন ডেবনা নদীতে এলাকার প্রভাবশালীরা ভবন নির্মাণ করে সরকারের সম্পত্তি দখলের উৎসব শুরু হয়েছে। উল্লেখিত বিষয়ে অবৈধভাবে নদী তথা সরকারি সম্পত্তি দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে গত ১৬ মার্চ একটি লিখিত আবেদন করা হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে আদালত বলেন নদী, জলাশয়, উন্মুক্ত মাঠ, স্থান দখল ও পূনরুদ্ধার অধ্যদেশ ১৯৭০ এর ৭ (১) অনুযায়ী অপরাধ। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডেবনা নদীতে পাকা গৃহ নির্মাণের ফলে নদী সংকোচিত হওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিস্কাশনে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে পার্শ্ববতী কবরস্থান ভাঙ্গনসহ এলাকার বিরুপ প্রভাব পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া নদ নদীর দখল নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন ঝগড়া বিভাদ ও ঝামেলা লেগেই চলছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী জানান, তাহিরপুর মাদ্রাসা বাজার ছাড়াও ডেবনা নদীর দুই পাশে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ঝাড়া নদীর চর দখল করে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবী জানান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.