March 23, 2025, 2:49 pm

জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখেছে বাংলাদেশি মেয়েরা

সময় ডেস্ক ॥ মদিনা বেগম যখন প্রথম শুনলেন যে তার গ্রামের একটা ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে, তিনি সরাসরি ওই মেয়ের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেন এবং তাদেরকে এই বিয়ে ভেঙে দিতে রাজি করালেন। নিজেকে তিনি যে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলেন সেভাবেই ওই মেয়েকে রক্ষা করলেন তিনি। ১৯ বছর বয়সী মদিনা বৃটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, আমার বিয়ে আটকাতে আমি বাবা-মা’কে বুঝাতে পেরেছিলাম। তাদেরকে বলেছিলাম, আমাকে লেখাপড়া শেষ করতে দাও। আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াবো তারপর বিয়ে করবো। এখন তিনি নরসিংদী জেলার একটি কিশোরী সংঘের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেখানে কিশোরীরা ইংরেজি ভাষা ও ডিজিটাল দক্ষতার প্রশিক্ষণ নেয়। মদিনা জানান, এখন তার বাবা-মা তাকে বিশ্বাস করে এবং তিনি নিজেও অন্যের জন্য কথা বলার আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছেন।
তাদের এই সংঘটি মূলত পরিচালনা করে বৃটিশ কাউন্সিল ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কিশোরী ও তরুণীদের দক্ষ করে তোলা ও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ক্রমাগত তীব্র হতে থাকা রক্ষণশীল পরিবেশ তথা ইসলামিকরণের মধ্যে নারী অধিকার নিশ্চিতই এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। দুই বছর আগে শেখ হাসিনা সরকার বিশেষ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ের বৈধতা প্রদান করে। যদিও, বাংলাদেশ বাল্যবিবাহে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে এবং আমরা এই অবস্থা পরিবর্তনে অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক জানিয়েছেন, কিছু মানুষ আছেন যারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বলছেন। তাদের মতে, এটা এমন কিছু খারাপ নয়। কিন্তু আমরা সংবাদপত্রে বিভিন্ন প্রতিবেদনে পড়ি যে, স্থানীয় কর্মকর্তারা বাল্যবিবাহের খবরে ছুটে গেছেন। তাদের এমন বিয়ে বন্ধ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তারা ভাববেন, হয়তো তাদের বাবা-মা আদালত থেকে বাল্যবিবাহের অনুমতি নিয়েছেন! আর একবার বিয়ে হয়ে গেলে অনেক দেরি হয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গার্ডিয়ানকে বলেন, গত এক দশকে নারীদের ক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মেয়েদের বিষয়ে আমরা বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করি। শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার বাড়ছে। ঔষধ খাতের মতো বেশকিছু ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছে এবং সব পুরস্কার জিতে নিচ্ছে। তবে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। দীপু মনি বাংলাদেশ সরকারের ১৪ নারী মন্ত্রীর একজন। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ নারী নেতৃত্বাধীন রয়েছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদের স্পিকার সবাই নারী। শিরিন হক জানান, এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের অবস্থান ইতিবাচক বিষয়। এটি এদেশের মেয়েদের উৎসাহিত করছে। কিন্তু একইসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামীর মতো কট্টর ইসলামপন্থি দলের সঙ্গে আপস করছে। এতে দলটির অতীত সব অর্জন হুমকির মুখে পড়েছে। আদিবাসী নারীদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান স্পার্ক। তার প্রতিষ্ঠাতা মুক্তাশ্রী চাকমা বলেন, এখন বাংলাদেশিরা অনেক বেশি উদার। কিন্তু এই উদারতা শুধু শহরগুলোতেই দেখা যায়। গ্রামগুলোতে গেলে দেখা যায় তারা নারীবাদী শব্দটাই পছন্দ করে না। এখন আদিবাসী তরুণীরাও মুখ খুলতে শুরু করেছে। যদিও এটা ঢাকার মতো নয়। তবে আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। শিরিন হকের মতো অনেকেই এখনো আশাবাদী। তিনি বলেন, এই সরকার নারীর ক্ষমতায়নের সরকার হিসেবে নিজের যে ভাবমূর্তি রয়েছে সেটা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই এখনো আমাদের হাতে সুযোগ আছে। কিন্তু এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.