March 23, 2025, 2:11 pm

সাগর পাড়ি দেয়ার আগে বাবাকে ফোন করেন নিখোঁজ মোক্তাদির

নিজস্ব প্রতিনিধি :: ‘আব্বা আমি বাই- রোডে ইতালি পাড়ি দেবো কাল, জানি না কি হবে। তবে মনে বড় আশা। দোয়া করো, আম্মারেও বলবা দোয়া করতে।’ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার একদিন আগে বাবাকে ফোন করে কেঁদে কেঁদে এভাবেই বলছিলেন তিউনিসিয়ায় নৌকা ডুবে নিখোঁজ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া গ্রামের আব্দুল মোক্তাদির। ওই সময় অভাবী সংসারের ঘানি টানা বাবা ছেলেকে বলছিলেন, ‘বাবা, তোমার ইতালি যাওয়া লাগবে না। বাড়ি চলে আসো। দরকার হলে আমরা না খেয়ে থাকবো।’ কিন্তু মা-বাবার মুখে হাসি ফুটাতেই মোক্তাদির জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছিলেন। ইউরোপ যাওয়ার রঙিন স্বপ্নে বিভোর এই তরুণ সংসারের সুখ আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হলো না। মোক্তাদিরের সঙ্গে সাগরে সলিল সমাধি ঘটলো তার স্বপ্নেরও। ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপক‚লে অভিবাসীদের নৌকা ডুবে ৭৫ জন মারা যায়। এরমধ্যে ৩৫ জন বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গত রবিবার খবর আসে, মোক্তাদির নিখোঁজ রয়েছেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে শোকের মাতম শুরু হয়।মোক্তাদিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার মমতাময়ী মা। তার পাশেই বসে রয়েছেন বাবা। একই অবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও ইফতারের জন্য নেই কোনো প্রস্তুতি। শোকাহত প্রতিবেশীরাও। এদিকে মোক্তাদির ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন একই গ্রামের হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাইয়ুম। তারা চারবন্ধু একসঙ্গে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন। এর মাঝে আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মোক্তাদির ও মামুন মিয়া একটি নৌকায় উঠেন। সেই নৌকাটি ডুবে গেলে তিনজন সাঁতরাতে থাকেন। মামুন উদ্ধার হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন মোক্তাদির আর কাইয়ুম। অপর একটি নৌকায় ওঠা নূরুল আমীন নিরাপদেই ইতালি পৌঁছেছেন জানিয়ে বাড়িতে ফোন করেছেন। উদ্ধার হওয়া মামুন টেলিফোনে মামা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য জাহির মিয়াকে ফোনে বলেছেন, নৌকা ডুবে যাওয়ার পরও মোক্তাদিরের সঙ্গে তিনিও সাঁতার কাটতে থাকেন। এক পর্যায়ে হাত ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণ পর আর তাকে খোঁজে পাননি। তিনি বলেন, প্রায় ৫ মাস আগে সমবয়সী ৪ জন মিলে ঠিক করে ফ্রান্সে যাবেন। পরবর্তীতে বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা গ্রামের এক দালালের মাধ্যমে তারা বাড়ি থেকে বের হন। ইতালি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রত্যেকে ৯ লাখ টাকা কিস্তিতে দেবে বলে চুক্তি হয়। ‘প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধের পর প্রথমেই তাদের নেয়া হয় ভারতে। সেখানে ৫ দিন রাখার পর শ্রীলঙ্কায় নিয়ে রাখা হয় প্রায় সাড়ে ৪ মাস। শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত যেতে মাথাপিছু আদায় করা হয় ৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত ৯ মে তাদের ইতালি নেওয়ার উদ্দেশে নৌকায় ওঠানো হয়। ইতালি গিয়ে পৌঁছালে বাকি ২ লাখ টাকা পরিশোধের কথা ছিল।’ নিখোঁজ আব্দুল কাইয়ুমের বাবা হাজী আলাউদ্দিন বলেন, আমার ৮ ছেলে। এর মাঝে নিখোঁজ ছেলেটি সবার ছোট। অনার্স ভর্তি হওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সে। এক পর্যায়ে বিদেশে যাওয়ার কথা বলে। তার স্বপ্ন পূরণে ৯ লাখ টাকা দিতে সম্মত হই। কিন্তু এখন আমার ছেলেটাই নাই! বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গত ৯ মে গভীর রাতে লিবিয়া উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসীবাহী একটি বড় নৌকা ইতালি পাড়ি জমায়। নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে গেলে বেশির ভাগ যাত্রীর মৃত্যু হয়।  পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, নিখোঁজ ও উদ্ধার হওয়াদের বিষয়ে খোঁজ নিতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে তিউনিসিয়ায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.