স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন বলেছেন- রমজান মাস এলেই আমরা সিয়াম সাধনা করি, ধর্ম-কর্মের দিকে মনযোগী হই। আসুন আমরা শপথ গ্রহণ করি, শুধু রমজান মাস নয়, সারা বছরই আমরা যেন সততার সাথে জীবনযাপন করি। মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকি, ঘুষ দুর্নীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি আদর্শ ও সুন্দর জীবন গড়তে প্রত্যেকের বিবেককে জাগ্রত করার আহবান জানান। গত মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জ জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা কর্মচারি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তৃতায় একটি মামলার উদাহরণ টেনে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন বলেন- আমি যখন কক্সবাজারে সহকারী জজ ছিলাম তখন আমার আদালতে একটি যৌতুকের মামলায় বিজ্ঞ আইনজীবী বলছিলেন বাদীনিকে তার স্বামী যৌতুকের জন্য মারপিট করেছে, তাই সে তার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ চায়। এ সময় বাদীনি রাখাইন তরুণী বলে উঠে- না আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের জন্য মারপিট করেনি। যৌতুকও চায়নি। আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই। আমি বিচ্ছেদ চাই না। বাদীনির এ কথা শুনে বিচারক আমজাদ হোসেন বাদীনির কাছে প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। এ সময় বাদীনি রাখাইন তরুণী বলে- আমার স্বামী কোন উপার্জন করে না। আমার উপার্জনে সংসার চলে। মাঝে মধ্যে সে ‘পানিটানি’ খায়। ওই মাদকের জন্য আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমি স্বামীর এমন আচরণের কোন সমাধান আছে কিনা বুঝতে আইনজীবীর কাছে এসেছি। মামলায় যা লেখা হয়েছে তা আমি বলিনি। আমি স্বামীর সাথে থাকতে চাই। বিচ্ছেদ চাই না। একজন নির্যাতিত স্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রশংসা করে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন বলেন- একেই বলে বিবেক। মেয়েটির মধ্যে বিবেকবোধ কাজ করেছে। সে মিথ্যার আশ্রয় নিতে রাজি হয়নি। এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জজ আমজাদ হোসেন বলেন- আমাদের সকলের মধ্যে বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। মিথ্যা বলা পরিহার করতে হবে। ইফতারপূর্ব সভায় অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন ডিডিএলজি মো. নুরুল ইসলাম, পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী প্রমূখ। বিচারকগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জিয়াউদ্দিন মাহমুদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম নাসিম রেজা, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ শাহীনুর আক্তার, যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত এর বিচারক মোহাম্মদ শহীদুল আমিন, সিনিয়র সহকারী জজ সদর মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ বদরু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল হাসান শরীফ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম, সরকারি কৌশলী ভিপি এম এ মোছাব্বির বকুল প্রমূখ।
Leave a Reply