March 23, 2025, 3:03 pm

dav

নবীগঞ্জ শহরের ভাঙা সড়কের নিরব কান্না! টেন্ডার হলেও কাজ শুরু হচ্ছেনা

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তার বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সামান্য বৃষ্টির পরই মনে হয় রাস্তাগুলো যেন ধান বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। নবীগঞ্জ শহরের থানা পয়েন্ট থেকে কলেজ পর্যন্ত রাস্তাটি যেন আর যান চলাচলের উপযোগী নেই। এলাকাবাসী ক্ষোভের সঙ্গে যা বলল তার সারাংশ হচ্ছে, প্রথম শ্রেণির মর্যাদাধারী নবীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান সড়কগুলোর নীরব কান্না কেউই শুনছে না। নিরবে-নিভৃতে কাদঁছে নবীগঞ্জ শহর ও পৌর এলাকার সড়কগুলো। সংস্কারের অভাবে সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পিচের আস্তরণ ও ইটের খোয়া উঠে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানা-খন্দে ভরা সড়কগুলোতে চলাচল করতে প্রতিনিয়ত নানা ভোগান্তিতে রয়েছেন নবীগঞ্জ পৌরবাসী। অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় জলাবদ্ধতা। জ¦ালাময়ী বেহাল দশায় ঝাঝরা হয়ে গেছে সড়কের মায়াবী বুক। দূর্ভাগা মানুষের আকুতি-মিনতি, ফরিয়াদ কোন কিছুই যেন নজড়ে আসছেনা সংশ্লিষ্টদের। ভাঙা সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় অনেক ঘটনা। খাদ্য গুদামের রাস্তাটিও যেন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে নবীগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার ও ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করছে না।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে নবীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ৪৫ কিলোমিটার সড়ক আছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক মাত্র ২৮.৫৮ কিলোমিটার। ভূক্তভোগী একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত কম সড়ক, তাও দেখার কেউ নেই। শহরের ওসমানী রোডটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ, উপজেলা ভূমি অফিস, পৌরসভা কার্যালয়, খাদ্য গুদাম, সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, নবীগঞ্জ সরকারী ডিগ্রী কলেজসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টানে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ওই এটি। এমনকি এই রাস্তা দিয়ে কাজিরবাজার, ইনাতগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত যাতায়েত করেন কয়েক লক্ষাধীক মানুষ। এই রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানা-খন্দে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে থানা পয়েন্ট থেকে গন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। স্থানীয় ব্যাবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, রাস্তা ভাঙাচোরা বলে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। রিকশা উল্টে যায়। গত শুক্রবার বিকেলে একটি টমটম উল্টে গিয়ে কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছে। এমনকি শনিবার বিকলেও একটি অটো রিকশা উল্টে পড়েছে। রাস্তা ভাঙা থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা কাদা হয়ে যায় সড়ক। তখন ব্যবসায়ীদের বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভ দাশ জানায়, রাস্তা নষ্ট থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় আসা-যাওয়ার পথে। কলেজে রিকশায় গেলে প্যারাসিটামল সাথে রাখতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তাটির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে অথচ কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তাটির অবস্থা বেহাল থাকার পরও অবশেষে টেন্ডার হয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হচ্ছেনা। এনিয়েও ক্ষুব্দ শহরবাসী। স্থানীয়দের ভাষ্য- বড় বড় নেতাদের কারোও কি কখনও এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সৌভাগ্য হয়না..? নাকি বড় বড় দামী গাড়ি দিয়ে দাপিয়ে বেড়ান বলে এসব ভাঙা ও মরন ফাঁদ নজড়ে আসেনা তাদের। দূর্ভোগের শিকার স্থানীয় ব্যবসায়ী, পথচারী, শিক্ষার্থী ও যাত্রী সাধারনের অভিযোগ নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা ভোট আদায় করেন, কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর জনগনের কথা মনে থাকেনা। অনেক রাস্তায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে অধিকার কিংবা অভিযোগের সুরে নয়, ফরিয়াদির মত প্রতিকার চান ভোক্তভোগীরা। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদ ঘেষা অভয়নগরস্থ খাদ্য গুদামের রাস্তাটি যেন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এই রাস্তাটি দেখলে মনে হয় যেন এটি গ্রামের কোনো মেঠোপথ। গাড়ি ও রিকশা নিয়ে যেতে কেউ সাহস করে না। কাদা মাটি থাকায় পায়ে হেটে গেলেও অনেক মানুষ মাথা ঘুরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পড়ে যান। গর্ভবতী মহিলাদের অবস্থা যেন একেবারেই করুণ। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাগুলো মেরামত করা না হলে দিন দিন ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে জানান স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরী জানান, প্রায় ৮০ লক্ষ টাকায় থানা পয়েন্ট থেকে উপজেলা পরিষদ এর কালভার্ট পর্যন্ত ৮৫০ মিটার সংস্কার ও ৩৩ লক্ষ টাকা খাদ্য গুদামের রাস্তা সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। কাজ শুরু করার জন্য তাদের সাথে আজও আলাপ হয়েছে। খুব শিগগিরই সংস্কার শুরু করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.