,

ঋণের সুদ হার কমানোর চেষ্টা

সময় ডেস্ক ॥ ব্যাংক সুদের হার কমানো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কোন উদ্যোগ কাজে আসেনি। বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। আমানতে সুদের হার কমেছে। একই স্থানে রয়ে গেছে ঋণের সুদের হার। ফলে আমানতকারীরা ব্যাংক বিমুখ হচ্ছেন। আর সুবিধা করতে পারছেনা বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সুদের হার ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর সাথে বিভিন্ন চার্জসহ সুদের হার দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। আমানত সংগ্রহে সুদের হার ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদ হারের পার্থক্য) রয়েছে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৪ সালের এই সময়ে ঋণ বিতরণে সুদের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সেই সাথে রয়েছে নানা প্রকার চার্জ। সবমিলে ঋণ বিতরণের সুদের হার দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। এবং আমানতে সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এবং স্প্রেড এর হার ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। মার্চে এ স্প্রেড হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অঙ্কে) নামিয়ে আনতে ব্যবসায়ীদের দাবি দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান সুদ হার কমাতে ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণে প্রয়োজনীয় কাজ করতে সম্মত হয়। শুরুতে স্প্রেড কমানোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৫ শতাংশ নামিয়ে আনার কথা বলা হয়। বিভিন্ন সময় ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকের প্রধানদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বরং আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো হয়েছে। কিন্তু ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো হয়নি। সেই সাথে রয়ে গেছে দৃশ্য-অদৃশ্য বিভিন্ন প্রকার চার্জ। স্প্রেড কমানোর নির্দেশও কার্যকর করেনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। স্প্রেড হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ বর্তমান গর্ভনর দায়িত্ব পর থেকেই। কিন্তু সর্বশেষ এ হার ৫ শতাংশেই রয়ে গেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর এ হার আরো বেশি। আমানতে তুলনামূলকভাবে বেশি হারে সুদ হার কমানোর ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর মন্দ প্রভাব পড়েছে বাজারে। আমানতকারীরা সঞ্চয়পত্রমুখি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, সুদ হার কমানোর বিষয়টি নির্দেশের কোন ব্যাপার নয়। বরং সুদ নির্ধারণে প্রভাবকগুলোর উপর কড়া নজরদারি করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে হবে; অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে; কর্মকর্তাদের বেতন-বোনাসসহ বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা যৌক্তিকিকরণ করতে হবে। এছাড়া অনলাইন, আইটি সিসটেমসহ বিভিন্ন প্রকার কার্যকম করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোন অযাচিত খরচ করছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেখতে হবে। যে কেউ ঋণ নিতে এলে তার ব্যবসা পরিকল্পনা না দেখে টাকা দিয়ে টাকা আটকে ফেলার বাইরে নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে হবে। অনুসন্ধানী ও সৃষ্টিশীল ব্যাংকিং করতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলো অদক্ষতাও ঋণের সুদ হার কমানোর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সুদ নির্ধারণে এ সব নিয়ামকগুলোর প্রতি দৃষ্টি না দেয়ায় ঋণে সুদের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা গেলে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া সুদ হার নির্ধারণে ব্যাংকার্স এসোশিয়েশনের মনোপলি ভাঙ্গতে হবে বলে মত দেন এই সাবেক গর্ভনর। সুদের হার বেশি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামো সমস্যা সমস্যাসহ নানা কারণে বিনিযোগ ভাটা চলছে। ব্যাংকগুলোতে অলস পড়ে আছে প্রায় লক্ষ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যাপারে রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সালোম মুর্শেদী বলেন, ঋণের হার বেশি হওয়ার কারণে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছি। ব্যাংকসুদের হার কমাতে না পারলে অন্য সুযোগ দিয়ে ব্যবসাকে সহযোগিতা দিতে হতে পারে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.