March 22, 2025, 7:47 pm

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিস দুর্নীতির আখড়া

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার আখড়ায় হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর ও উপজেলা জোনাল অফিস। অভিযোগ রয়েছে, অফিস পিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি সবাই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। সেবা প্রত্যাশীদের ফাইল আটকে রেখে নানা অজুহাতে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও বিদ্যুতের ঘনঘন আসা যাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে ঘুষের প্রভাব। এদিকে গত ১৪ই ফেব্র“য়ারি নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মোঃ ছোলায়মান মিয়া পদোন্নতি পেয়ে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর জেনারেল ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। এখানে যোগদানের পর থেকেই তিনি এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। সেবার নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে অফিস পিয়ন পর্যন্ত অনিয়মের সঙ্গে পরোক্ষভাবে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন কি বৈদ্যুতিক তার ও ট্রান্সফরমার চোরচক্রের সঙ্গেও রয়েছে যোগসাজশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় মিটার স্থাপনের নিয়ম থাকলেও প্রতি মিটারের জন্য হাতিয়ে নিচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা। কখনও এ অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ১০-১২ হাজার টাকায়। এ দিকে ঘুষবাণিজ্যসহ বহিরাগত দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিদিন সাধারণ গ্রাহকরা কোন না কোনভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। সমিতির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের নির্দিষ্ট দালালদের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদনের নামে অফিশিয়াল আইনকানুন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করেন। চাহিদা মতো উৎকোচ পাওয়া গেলে যত অবৈধ সংযোগই হোক না কেন তা বৈধতা পায়। আর উৎকোচ না দিলে নিয়মনীতির ভেতর থাকলেও বৈধটাকে অবৈধ দেখিয়ে নানা টালবাহানা করা হয়। বিশেষ করে নতুন সংযোগ নিতে গিয়েই গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হন। সবচেয়ে নতুন সংযোগ নিতে গিয়ে সহজ-সরল মানুষ দ্বারস্থ হন এলাকার পরিচিত ইলেকট্রিশিয়ানের। নতুন সংযোগ নীতিমালার ভেতরে হলে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা আর নীতিমালার বাইরে হলে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে ওই ইলেকট্রিশিয়ান দরদাম টিক করে তার মক্কেল গ্রাহককে আরও ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে বলেন। আর এই টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র ও গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী টাকা পেলে নতুন সংযোগ প্রদানে অনুমোদন দেন অন্যথায় ট্রান্সফমার ওভারলোডসহ নানা অজুহাত সৃষ্টি করেন। এছাড়া ইলেকট্রিশিয়ান ও দালালরা ঘটনাস্থলে না গিয়েই দালালচক্রের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে আবেদন ফরমে সই করে দেন। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির ব্যাপারে হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও চুনারুঘাট বাহুবল নবীগঞ্জ নোয়াপাড়া লাখাই জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের বক্তব্য নিজস্ব লোকবলের বাইরে কার্যালয়ের কোন দালালচক্র নেই। কেউ যদি পল্লীবিদ্যুতের পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন তাহলে তাকে পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের কাছে সোপর্দ করার অনুরোধ জানান তিনি। তারা আরও বলেন, টাকাপয়সা ও হয়রানি সংক্রান্ত বিষয়ে যদি কোন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত ৩০শে এপ্রিল দৈনিক মানব জমিন-এ ‘উৎকোচ ছাড়া কোন কাজই হয় না’ শিরোনামে উপরোউক্ত বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও হপবিস কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.