,

চুনারুঘাটে ভারতীয় মাদকের সম্রাজ্য

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ মাদকের ভয়াবহ বিস্তারে উদ্বিগ্ন সারাদেশ। একের পর এক নতুন নতুন মাদকদ্রব্যের আবিস্কার প্রচলন ও বিস্তার অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। নির্দোষ আনন্দ ও উদ্দীপনা, কখনো কখনো চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত মাদক দ্রব্য আজকের দিনে বিশ্ব পীড়ায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসার চেয়ে বেশি পরিমাণে এর ব্যবহার বেড়েছে অধুনা কালের তরুণ ও যুবক সমাজে। মাদকের হৃদয় বিদারক ব্যবহার আজকের সুশীল সমাজের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। মাদক দ্রব্যের প্রতি উঠতি বয়সের যুবকদের আকর্ষন অন্য যেকোন প্রকার দ্রব্যের প্রতি আকর্ষনের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধুমাত্র উন্নত বিশ্ব নয় বাংলাদেশ এর মত উন্নয়নশীল তৃতীয় স্তরের দেশ গুলো মাদকের ছোবলে দংশিত। মাদকের এই ভয়াবহ রূপ হঠাৎ করে ধারন করেনি। দীর্ঘ পথ পেড়িয়ে মাদকের কালো হাত থাবা মেলেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কারা, কিভাবে এবং কোন পথে বিস্তার ঘটছে মাদকের, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজ আর বেশী দূর যেতে হয়না। মহানগর-মফস্বল-গ্রামের প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় মাদকের আনাগোনার শিকার হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। রাজধানী সহ সকল বড় বড় শহর ছাড়িয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা চুনারুঘাটে গড়ে উঠেছে মাদকের সম্রাজ্য। চুনারুঘাট পৌর শহর থেকে ভারতের সীমান্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে থাকার কারণে চুনারুঘাটে ব্যাপক ভাবে আসছে মাদকদ্রব্য ও ভারতীয় অবৈধ পণ্য। চুনারুঘাটের সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় প্রভাবশালী রাজনীবিদদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে মাদকের আঁকড়া। চুনারুঘাট পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান নিয়ন্ত্রন করেন কয়েকজন মাদক সম্রাট। এই সম্রাটরা আবার জড়িত আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে। অভিযোগ আছে রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার কারনে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তারা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদকের ব্যবসা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুনারুঘাট পৌর শহরের প্রায় ৭ থেকে ৮ টি স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক বিক্রি ও সেবনের আস্তানা। সংবাদ সংগ্রহের জন্য গিয়ে দেখা যায়, চুনারুঘাট পৌর শহরের দক্ষিণ বাজারে অবাধে চলছে মাদকের ব্যবসা। এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন এক প্রভাবশালী নেতা। যার ভয়ে ঐ এলাকার শিক্ষিত সমাজ ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না। চুনারুঘাট উত্তর বাজারে অনিক ব্রিক্স এর পিছনে স্থানীয় এক নেতার ছত্রছায়ায় চলছে মাদকের ব্যবসা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুনারুঘাটের ছবিঘর সিনেমা হলের সামনে এবং আশপাশের এলাকায় চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। ঐ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন  প্রভাবশালী এক নেতা। তিনি নিজেই চালিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যবসা। উলেখ্য, ঐ মাদক সম্রাটের অনুপস্থিতিতে অবৈধ এই ব্যবসা চালিয়ে যান উনার স্ত্রী। চুনারুঘাটে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় বেপরোয়া ভাবে চলছে মাদক ব্যবসা। এছাড়াও চুনারুঘাট পৌরসভার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পৌর এলাকার আশেপাশে গড়ে উঠছে নিত্য নতুন মাদকের ব্যবসা। এই মাদকের ছড়াছড়ির কারণে চুনারুঘাটের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা হাতের নাগালে মাদক পাওয়ায় তারা অবাধে মাদক সেবন করে যাচ্ছে, মাদক সেবনের কারণে পরিবারে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা, দৈনন্দিন লেগে রয়েছে কলহ। এই সব পরিবারের ছেলেরা যখন বাসা থেকে টাকা আনতে পারেনা তখন তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় জড়িয়ে পরে মাদক এবং অবৈধ চোরাচালান ব্যবসায়। আমরা যখন খবর সংগ্রহ করি তখন কয়েকজন প্রগতিশীল লোকের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তারা বলেন গত ৫-৬ বছর আগেও এমনটা ছিলনা, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এর তথ্যমতে জানতে পারি ইতোমধ্যে চুনারুঘাটের সীমানা ছাড়িয়ে এই ভারতীয় মাদকদ্রব্য হবিগঞ্জ জেলা তথা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। আগে আমরা সন্ধার পরে বিভিন্ন স্থানে বসে গল্প ও আড্ডা দিতে পারতাম, কিন্ত ঐ সকল মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের জন্য সন্ধ্যার পরে কোন স্থানে বসে গল্প করার মত পরিবেশ থাকে না। স্থানীয় সাধারণ মানুষের একটাই দাবী যেভাবে টেকনাফের ইয়াবা সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করছে, আমরা চাই আমাদের এলাকার মাদক সম্রাটদেরকে তেমনিভাবে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন যেন এই ভারতীয় মাদক ব্যবসা বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে, না হলে চুনারুঘাটের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষ জড়িয়ে পড়বে এই ভয়াবহ মাদক সেবনে, তৈরী হবে ঐ ইয়াবা সম্রাটের মত কোন নতুন সম্রাট।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.