স্টাফ রিপোর্টার : নবীগঞ্জ উপজেলায় সরকারী ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভে প্রচার করার জের ধরে আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন কর্তৃক ৩ সাংবাদিককে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটানোর ঘটনার ২১ দিন অতিবাহিত হলেও সাংবাদিক পেটানোর মূল নায়ক ও বহুঅপকর্মের হোতা বিতর্কিত চেয়ারম্যান হারুনকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমন কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন! আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন প্রতিনিয়ত এলাকায় যাতায়াত করে থাকলেও অদৃশ্য কারণে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ এমন অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। ইউপি চেয়ারম্যান হারুনের মোবাইল নাম্বার সচল রয়েছে, দিব্বি ফেইসবুকে পোস্ট করছেন নিয়মিত। সার্বক্ষণিক অনলাইনে দেখা যায় চেয়ারম্যান হারুনকে। তারপরও পুলিশের দাবী বিভিন্নস্থানে অভিযানের পরেও চেয়ারম্যান হারুনের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। গ্রেফতারে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল ‘হারুণের নেটওয়ার্ক কী পুলিশের নেটওয়ার্কের চেয়ে গতিশীল’!
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের এই সংকট সময় মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান তাদের দেন ৫ কেজি করে। এ নিয়ে গত ৩০ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘‘আসুন অসহায় দিনমজুরদের মনের কথা শুনি’’ শিরোনামে এক লাইভে সাধারণ মানুষের বক্তব্যসহ অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমেদ। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সংবাদ ও ফেইসবুকে লাইভ প্রচার করার জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে গত (১ এপ্রিল) বুধবার দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি শাহ সুলতান আহমেদকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটান আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন ও তার লোকজন। এ সময় সাংবাদিক সুলতানকে উদ্ধার করতে গেলে চেয়ারম্যান হারুন ও তার লোকজন কর্তৃক হামলার শিকার হন দৈনিক আমার সংবাদের প্রতিনিধি এম মুজিবুর রহমান ও চ্যানেল এস এর প্রতিনিধি বুলবুল আহমেদ। পরে ¯’ানীয়রা আহত ৩ সাংবাদিককে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর আহত দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি শাহ সুলতান আহমেদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অপর দুই আহত সাংবাদিককে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় গত (২রা এপ্রিল) বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান বাদি হয়ে চেয়ারম্যান হারুনকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর চেয়ারম্যানের সহযোগী খালেদ আহমদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের কোনো হদিস পাচ্ছেনা বলে দাবী করছে পুলিশ। সাংবাদিকদের অভিযোগ, ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনার ২১ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো মুল হোতা চেয়ারম্যান হারুনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অদৃশ্য কী কারণে ইউপি চেয়ারম্যান হারুনকে পুলিশ গ্রেফতার করছেনা তা আমরা জানিনা। পুলিশের এমন রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে আমাদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক করছে। আমরা আশা করি পুলিশ দায়িত্বশীল হবে এবং সাংবাদিক পেটানোর মূল নায়ক ইউপি চেয়ারম্যান হারুনসহ জড়িত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে মানুষকে ঘর মুখী করতে এবং সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে আমরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। পাশাপাশি চেয়ারম্যান হারুনকে ধরতে আমরা প্রাণপন চেষ্টা করে যা”িছ, ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আত্মগোপনে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন – ‘‘সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুনকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী’’।
হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি হচ্ছে-
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মুহিবুর রহমান হারুন চেয়াম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে নিরীহ মানুষদের হয়রানি ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না স্থানীয়রা। সর্বশেষ চেয়ারম্যানের ত্রাণ বিতরণে অনিয়মমের সংবাদ প্রকাশ করায় ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ নবীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি শাহ সুলতান আহমেদসহ ৩ সাংবাদিককে। যা নিয়ে সাংবাদিক, সুশীল সমাজসহ জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর: বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ‘‘নবীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান হারুনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের টিফিন বক্স বিতরণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা নিয়ে পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর: বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ‘‘নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স ও হোল্ডিং টেক্স এর টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
২০১৮ সালের ২৬ জুন: ‘‘আউশকান্দি ইউনিয়নে ড্রেন কালর্ভাট নির্মাণে চেয়ারম্যান হারুণের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ’’ শিরোনামে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
এছাড়াও ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই : চেয়ারম্যান হারুনের বিরুদ্ধে একই রাস্তায় ৩ বার বরাদ্দসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এনে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিন ৯ জন ইউপি সদস্য। পরে তার ওপর আনা হয় অনাস্থা এবং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বয়কট করেন ৯ জন ইউপি সদস্য। এর বাহিরেও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান হারুণের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে ওই এলাকার জনগন।
Leave a Reply