,

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বচ্ছতা গ্রুপের মানবিকতায় মাকসুদা দম্পতির মুখে ভুবন জুড়ানো হাসি

স্টাফ রিপোর্টার : সন্ধ্যার পর বাজারে একটি ঔষধের ফার্মেসীতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন টকবগে কয়েকজন তরুণ। গত সোমবার হঠাৎ এক লোক স্ত্রী অসুস্থ সন্তান সম্ভাবা বলে কান্না শুরু করে। তার স্ত্রীর সিজার করতে হবে। ডাক্তারের দেয়া নির্ধারিত তারিখ ছিল এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখ। কিন্তু সেই তারিখ অনেক আগেই পার হয়ে যায়। ডাক্তার দ্রুত সিজার করাতে তাগিদ দেন। টাকার জন্যে সিজার করাতে পারেননি রুবেল নামের ওই যুুবক। অনাগত সন্তান আর স্ত্রীর প্রতি একজন অসহায় মানুষের এমন ব্যাকুলতায় বসে থাকেননি আড্ডা দেয়া সেই তরুণেরা। হাত বাড়িয়ে দেন সহায়তার। ঘটনাটি মাধবপুরের চৌমুহনী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের। জানা যায়, রুবেল মিয়া নামের ওই যুবকের পূর্ব পুরুষ বি-বাড়িয়া জেলার সরাইলের বাসিন্দা। মাধবপুরের চৌমুহনী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে অন্যের পরিত্যক্ত একটি জায়গাতে দীর্ঘদিন যাবত ছোট একটা ঘর করে বসবাস করছেন। রুবেলের মা মারা গেছেন গত বছর। বৃদ্ধা বাবাকে নিয়ে এখানে বসবাস। গতবছর জগদীশপুর ইউনিয়নের বেজুড়া গ্রামে পারাবারিক ভাবে বিয়ে করেন রুবেল। প্রকৃতির নিয়মে তার স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হলে তিনি চৌমুহনী বাজারে ঔষুধের ফার্মেসীর সামনে আসেন। তার আকুলতা দেখে মন গলে সাংবাদিক হামিদুর,দুলালসহ আড্ডায় থাকা তরুণদের। এরই মধ্যে ঔষধের ফার্মেসিতে আসেন চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিনা আক্তার। রুবেলের কথা শুনে সেলিনা আক্তার সাংবাদিক হামিদুর রহমানকে তাদের সংগঠন স্বচ্ছতা গ্রুপের মাধ্যমে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন। সেলিনা আক্তারের কথামতো রুবেলকে সহযোগিতা করার ভাবনা দেখা দেয় সাংবাদিক হামিদুর রহমান এর মনে সেই থেকে যোগাযোগ করে তাদের অনলাইন ভিত্তিক মানবিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বচ্ছতা গ্রুপের সদস্যদের সাথে। বাসা ফেরার পথেই অনলাইন গড়ে উঠা মানবিক সংগঠন স্বচ্ছতা গ্রুপের উদ্দ্যোক্তা মানবতার আইডলম্যান খ্যাত করিমুলকে ফোন করে সাংবাদিক হামিদুর রহমান বিষয়টি নিয়ে ফোন করে বলেন। তিনি বিষয়টি তাদের ফেসবুক গ্রুপে উপস্থাপন করেন। এরপর স্বচ্ছতার সদস্য শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুুুত্র সাকিব আলম চৌধুরী তাৎক্ষনিক সিজারের জন্যে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই রাতে তিনি বার বার ফোনে তাগিদও দেন রাতেই রুবেল এর স্ত্রী মাকসুদার সিজার করানোর জন্যে। সাংবাদিক হামিদুর রহমান বার বার চেষ্টা করেন রুবেলের সাথে যোগাযোগের। অবশেষে সেহেরীর পর সহযোদ্ধা দুলালের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় রুবেলের সাথে। রুবেল কে ভোর রাতেই পাঠানো হয় তার স্ত্রী মাকসুদাকে তার শ্বশুর বাড়ি বেজুড়া থেকে এনে মাধবপুরে দি ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করাতে। ১৮ তারিখ সকাল ১০ টায় দুলালকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন সাংবাদিক হামিদুর। কিন্তুু রুবেল তার স্ত্রী মাকসুদাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেনি। তাৎক্ষনিক সাংবাদিক হামিদুর রহমান যোগাযোগ করেন রুবেলের সাথে। রুবেল জানান, তার স্ত্রীকে কারা যেন ভয় দেখিয়েছে সিজার করলে সে মারা যাবে, তাই সে হাসপাতালে আসবে না আর সিজার করাবে না। রুবেল বারবার অনুরোধ করছিলো তার স্ত্রীকে গিয়ে বুঝানোর জন্যে। পরে সাংবাদিক হামিদুর রহমান তার সঙ্গী দুলাল সিদ্দিকীকে সাথে নিয়ে ছুটে যান বেজুড়া গ্রামে রুবেলের শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ মাকসুদার বাবার বাড়িতে। অনেক বুঝিয়ে অবশেষে ভয় দূর করতে সক্ষম হন তারা। সারাক্ষণ হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে টেনশন করতে থাকেন তারা। সেই সাথে টেনশনে ছিল স্বচ্ছতার প্রতিটি সদস্য বিশেষ করে সাকিব আলম চৌধুরী বারবার ফোন। তিনি আপডেট জানত চাইতেছিলেন। দুপুর ২টায় মাকসুদার সিজার হল। দুনিয়ার আলো করে এল জন্ম নিল ফুঁটেফুঁটে একটি ছেলে সন্তান। চাঁদের মতো সুন্দর ফু্ঁটফুঁটে শিশুটিকে কুলে নিয়ে এখন মহাখুশি মাকসুদা। ভুবন জোড়ানো হাসি তার মুখে। আর রুবেল তো আনন্দে কেঁদে ফেলে। তবে এই হাসিটা আনন্দের। খুশির খবরটা স্বচ্ছতা গ্রুপের সব সদস্যদের জানানো হয়। সবাই মহা খুশি। স্বচ্ছাতার এমন মানবিক কাজের কথা শুনে চৌমুহনী ইউ/পি চেয়ারম্যান আপন মিয়া সিজারের খরচে স্বচ্ছতার মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন । বৃহস্পতিবার সকালে স্বচ্ছতার সদস্য সাকিব আলম চৌধুরী, জুবায়েদ স্বপন, মামুন, হাসান কবির সোহাগ, দুলাল, সাংবাদিক হামিদুর সহ উপস্থিত থেকে হাসপাতালের সিজারের বিল পরিশোধ করেন এবং বাচ্চার জন্যে দোয়া করে আসেন। স্বচ্ছতার এই একটি মানবিক উদ্দ্যোগই রুবেল মাকসুদা দম্পতির মুখে হাসি ফুঁটিয়েছে। না হয়তো যে কোন বিপদ হতে পারতো মাকসুদার। ডাক্তারের দেওয়া ২৪ ঘন্টার ভিতরে মাকসুদাকে সিজার করিয়ে প্রমাণ করলো স্বচ্ছতার প্রত্যকটি সদস্যের মানবতাবাদিদের মনের জোরেই রুবেল মাকসুদা দম্পতির মুখে হাসি ফুঁটিয়েছে। বিশ্ব মহামারির এই কঠিন সময়ে স্বচ্ছতার এই মানবিক কাজ উজ্জ্বল দৃ্ষ্টান্ত হয়ে থাকবে। স্বচ্ছতার সদস্য সাকিব আলম চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক হামিদুর রহমান ও রুবেল আমাদের কাছে প্রস্তাবটি করেন তখন আমার ভেতর থেকে মনে হয় আমার কোনো স্বজন বা ভাই হয়তো এই সমস্যায় পড়েছে। আমার মন থেকে ওই বোনের চিকিৎসার জন্য দায়িত্ব পালন করেছি একজন ভাই হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবার-পরিজন ফেলে আমরা কাজ করছি, জানিনা আমাদের ভবিষ্যত কি! আমরা সেটা ভেবেই মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। ভাল লেগেছে আমাদের কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। মা ও ছেলে এখন সুস্থ আছে। আল্লাহ ওদের ভাল রাখুক। আমরা যেন মানবিক সদস্য হয়েই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে পারি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.