March 23, 2025, 4:03 am

মানবতাবিরোধী মামলার পলাতক আসামীবানিয়াচঙ্গের আব্দুর রাজ্জাক মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামি রাজাকার আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আতানগিরি পাহাড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাজাকার রাজ্জাক হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্যরা মৌলভীবাজার জেলা সদরের আথাগিরি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে রাজাকার রাজ্জাককে গ্রেফতার করে। আব্দুর রাজ্জাক মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার চাচাতো ভাই এবং তাদের সঙ্গে একই মামলার আসামি। রোববার (১৭ মে) তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রোববারই এ তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও তাপস কান্তি বল। ২৫ মে তা আমলে নেওয়ার বিষয়ে শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য করেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। গত ৩০ এপ্রিল একই মামলার আসামি বড় মিয়া-আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সে সময় এ মামলার তদন্তকালে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছিলেন প্রসিকিউশন। এর আগে ২৯ এপ্রিল ধানমন্ডি কার্যালয় সেফহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। বড় মিয়া-আঙ্গুর মিয়া-আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ২৮ এপ্রিল শেষ করেন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুর হোসেন। এতে ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমুরশামা গ্রামের বাসিন্দা গ্রেফতারকৃত মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই ছিলেন রাজাকার কমান্ডার। তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক। আসামিরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে ফেলেন আসামিরা। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মরহুম মেজর জেনারেল এম.এ রবের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান এবং ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেন। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একই দিন বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাদ মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাদ মিয়ার বোন বিষপানে করে আত্মহত্যা করেন। চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের বাংলা ভাদ্র মাসের যেকোনো দিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান তারা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যান আনছার আলী। গত ১০ ফেব্র“য়ারি তদন্তের স্বার্থে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতারের আবেদন জানান প্রসিকিউশন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর পরই বেলা ১২টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া (৭০) ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে (৬৫) গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। ২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪ এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা (নং- ২৭০/০৯) দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত ১১ মার্চ রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংস্থা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.