এম.এ আহমদ আজাদ ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর (পুর্ব) ইউনিয়নের বড় ভাকৈর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রুমেনা বেগম (৩৫), ছেলে মুসা মিয়া (৭) ও মেয়ে মুসলিমা খাতুন (৫) এর মৃত্যুর ঘটনার ২ মাস ৫ দিন পর পূণঃরায় ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। উক্ত ঘটনার মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬/০৪/২০১৫ তারিখে বিজ্ঞ আদালতের নিদের্শে গতকাল বুধবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হবিগঞ্জ গোয়েন্দা শাখার (ডি.বি) এস.আই মোহাম্মদ ইকবাল বাহার কে সাথে নিয়ে হবিগঞ্জের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার নিহত রুমেনা বেগমের পিত্রালয় উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের মামদপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে রুমেনা বেগমের মৃত দেহ উত্তোলন করেন। লাশ উত্তোলনের সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপসহ এলাকার শত শত মানুষের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সকালে বড় ভাকৈর গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী রুমেনা বেগমকে গাছের সাথে ঝুলন্ত ও তাদের ছেলে মুসা মিয়া (৭) ও মেয়ে মুসলিমা খাতুন (৫) এর লাশ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এনিয়ে এলাকায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। চাঞ্চল্যকর মা, ছেলে ও মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে জনতার মনে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধে। স্বামীর পরিবার দাবী করে রুমেনা বেগম তার দু’ সন্তানকে পুকুরে ফেলে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে। তবে রুমেনার পিত্রালয়ের লোকজন তাদের এ দাবী মানতে পারেনি। তারা দাবী করেছেন পারিবারিক কলহের কারনে রুমেনাসহ অবুঝ দু’ সন্তানকে স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ফরিদ মিয়া (৪০)কে তৎকালীন সময়ে আটক করে পুলিশ। এদিকে রুমেনার স্বামী ফরিদের দাবি, রুমেনা মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। রাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়ার পর সন্তানদের পুকুরে ফেলে নিজেও আত্মহত্যা করেন বলে দাবী করেন ফরিদ মিয়া। অপর দিকে রুমেনার বাবা উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের মামদপুর গ্রামের মাসুক মিয়া দাবী করেছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে তাদের দাম্পত্য কহল চলে আসছিল। প্রায় ২মাস আগে দাম্পত্য কহলের জের ধরে রুমেনা ও তার দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি আটক ছিল। এক পর্যায়ে শালিসে মিমাংসার মাধ্যমে স্বামীর বাড়ি ফিরে আসে। রুমেনার বাবা ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের দাবী রুমেনার স্বামী ফরিদ মিয়া ও তার স্বজনরা তাদেরকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক তৈরী করেছে। নিহতের ভাই শাহীন মিয়া জানান, ভোর ৫ টার দিকে মৃত রুমেনার দেবর ফোনে তাদের জানায়, ফরিদ মিয়া তার স্ত্রী রুমেনা ও দু’সন্তানকে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকদের নিয়ে ঘটনাস্থল বোনের বাড়ি ভাকৈর গ্রামে ছুটে আসেন। এ সময় বোনের মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় এবং দু’ অবুঝ সন্তানের মৃতদেহ ঘরে ভিতরে পড়ে থাকতে দেখি। পানিতে ভিজানোর কোন আলামত পাওয়া যায়নি বলেও দাবী শাহীনের। শাহীন বলেন, তার বোন ও সন্তানদের স্বামী ফরিদ উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ট তদন্তসহ ঘাতকদের ফাঁসি দাবী করে আসছিলেন। এ ঘটনায় রুমেনা বেগমের চাচা আশোক মিয়া বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করার পর স্বামী ফরিদ মিয়া এবং কাজের লোক আবুল হোসেন ব্যাতিত অন্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের পরিবার আসামী গ্রেফতারে অবহেলার অভিযোগ তুলেন তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে নিহতের ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার আলামত আসলে বাদী বিজ্ঞ আদালতে ওই রির্পোটের উপর অনাস্থার আবেদন করে পুণঃরায় ময়না তদন্তের দাবী জানান। বর্তমানে মামলাটি হবিগঞ্জের গোয়েন্দা শাখা (ডি.বি) পুলিশ তদন্ত করছেন। এদিকে গত ২৬ এপ্রিল আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত রুমেনার মৃতদেহ উত্তোলন করে পূণঃরায় ময়না তদন্তের জন্য আদেশ দেন। আদেশ প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার দুপুরে নিহতের পিতার বাড়ি মামদপুর কবরস্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
Leave a Reply