,

হৃদয় থেকে বলছি,জয় দেবের জয় হউক …. এম এ বাছিত

জয় অর্থ বিজয়ী,দেব শাব্দিকতায় পূজনীয়,ভদ্র এতো সভ্যতার সংযোজন। সভ্যতার অনুকরণ,ভদ্রতায় অনুসরণ এবং বিজয়ে উন্মাদনা। সততা,নিষ্ঠা,কর্তব্য পরায়ণ আর দায়িত্ববোধের মিশ্রণ। নামের স্বার্থকতা,বক্তৃতায় মুগ্ধতা,সন্মোহনী শক্তি,শব্দের অসাধারন গাঁথুনি। অনেক গুণের মিশ্রণে বিশেষায়িত। তিনি হলেন,হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র। রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ি,সাংবাদিক,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে আস্থায় সিক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা। অল্প কথনেই আশ্বস্থ হয় যে কোন মানুষ। ভুক্তভোগীর শান্তনা’’ আর সুবিধা ভোগীদের যন্ত্রনা হিসেবে পরিচিত। পেশাগত কর্মে অনেক বড় কর্তার সাথে সখ্যতা হয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি,পুলিশের চাকুরী,সোজা কথায় যাকে বলে ঘড় ঃযধহশ’ং লড়ন.ব্যাতিক্রম এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র। কয়েকবারের স্বাক্ষাৎ আর অল্প কথনে সিক্ত আমি। কীর্তি নারায়ন কলেজের কীর্তিতে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলাম। ১লা ফেব্রুয়ারী ২০১৫। ভাটি অঞ্চলের অবহেলিত জনপদে জন্ম দাতার স্মৃতির ভাস্বরে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন রণাঙ্গনের সম্মুখ যুদ্ধা মেজর (অব:) সুরঞ্জন দাশ। অনুষ্ঠানে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আমাকেও সম্মাননা দিয়ে কৃতজ্ঞতায় ঋণী করেন। আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন পুলিশ সুপার। উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী,শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল হান্নানসহ অনেক গুণীজন। কলেজ অডিটোরিয়াম শিক্ষার্থী আর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনের উপস্থিতিতে পূর্ণ। কলেজের নবীণ বরন ও সুধী সংবর্ধনায় পুলিশ সুপার প্রধান অতিথি ? সে আবার হয় নাকি ! আসলে মেজর (সুরঞ্জন বাবু) কি করতে চান? পুলিশকে নিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান ? হাস্যকর। বিদ্রোপাত্তক অনেক কথা! নিজের মনেই অনেক প্রশ্ন। অনেকের কথোপকথন,সুরঞ্জন বাবুর হাত নাকি অনেক লম্বা ? মন্ত্রী,হুইফ,এমপি,কমিশনার,ডিসিদের মধ্য থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানালে কলেজ উপকৃত হত। কিছু অনুদান এবং এমপিও ভুক্তির স্বীকৃতিতে কাজে আসত। নিয়ে আসছেন পুলিশ সুপার ! আসলে ব্যতিক্রমী আয়োজনের ধারনাটা আমিই দিয়েছিলাম। কলেজের অনুদান আর এমপিও ভুক্তি নিয়ে চিন্তিত নন মেজর (বীর মুক্তিযুদ্ধা সুরঞ্জন দাশ)। নবীনদের বরণ অনুষ্ঠান কানিকটা বিলম্বে শুরু হল। চমকের অপেক্ষা! আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে জয়দেব কুমার ভদ্র। শুরু করলেন বক্তৃতা। পিনপতন নিরবতা। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা,একনিষ্ঠতা আর দায়িত্ববোধ নিয়ে ভাষণ দিলেন। নিজের শিক্ষা জীবন,দারিদ্রতাকে জয় এবং আত্ব প্রত্যয়ের দীক্ষা দিলেন। এযেন দার্শনিকের দর্শন। মুগ্ধতায় মোহিত অনুষ্ঠান। এযেন মিলিয়ন ডলারের আয়োজন ? শব্দের নিখুঁত গাথুনি আর মার্জিত বক্তৃতায় ভিন্নতার আমেজ। নিজের স্মৃতিতে হারিয়ে গেলাম। চেয়ারম্যান মেহের আলী মহালদারের বাড়িতে ভোজন পর্বে অংশ গ্রহণ। সেখানেও ব্যাতিক্রম জয়দেব কুমার ভদ্র। শিক্ষার্থী,অভিবাবক,সুধী মহলের প্রশ্ন পুলিশে দার্শনিকতার সংযোজন? ১২ মে ২০১৫। নবীগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলীর বিদায় সংবর্ধনা এবং নবাগত ওসি আবদুল বাতেন খাঁনের যোগদান অনুষ্ঠান। বিদায়ের সুর বিরহ বেদনায় ভরপুর। পিতৃ¯েœহে সিক্ত লিয়াকত আলীর বক্তব্যে আবেগ বিদ্যমান। অবিচল এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র। প্রশংসা,দুর্বলতা এবং উপদেশ মিশ্রিত বক্তৃতায় সকলকে মুগ্ধ করলেন। ২৩ মে ২০১৫। হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনের ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পুলিশ কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সমন্বয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অংশ গ্রহণ করেন নবীগঞ্জ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক বৃন্দ। আয়োজিত কর্মশালায় সকল থানার ওসিরা অংশ গ্রহণ করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশের সাধারন সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী। হঠাৎ সঞ্চালক আর দর্শক সারিতে পুলিশ সুপার। পাল্টে যায় দৃশ্যপট। মুহুর্তেই পুলিশ ও জনতা এক সারিতে। র‌্যাফল ড্রয়ের মতো সাদা কাগজের কূপন দেয়া হয়। খোয়াই,যমুনা,সুরমা। তিনটি নদীর নাম সংবলিত কূপন দিয়ে তিনটি গ্রুপ তৈরী হয়। বিরল এক অভিজ্ঞতা। তিন গ্রুপের নিকট সাদা কাগজ আর কলম দেয়া হয়। জনগণের সেবা নিশ্চিত করণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্থিতিশীল আইন শৃংখলায় করুনীয় ও জনগণের দুর্ভোগ ও সমাধান কল্পে প্রস্থাবনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরীর নির্দেশনা দেন পুলিশ সুপার। মাইক্রো ফোন হাতে নিয়ে মনিটরিং করেন। খোয়াই গ্রুফ হিসেবে বিজয়ী হই। প্রশংসায় সিক্ত হই। পুলিশই জনতা’’জনতাই পুলিশ শব্দের যথার্থতা খোঁজে পাই। বৈচিত্রে ভরপুর এক অভিজ্ঞতা। থানার ওসি,জনপ্রতিনিধি (ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বৃন্দ) শিক্ষক,সাংবাদিক,ব্যবসায়ি মুর্হুতেই এক কাতারে সামিল হই। মাদক,অসামাজিক কর্মকান্ড,জঙ্গীবাদ,মানব পাচার রোধ,ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও স্থানীয় বিরোধ নিরসনের কৌশল নিয়ে চমৎকার প্রতিবেদন তৈরী হয়। ১৯০ বছর পূর্বে ১৮২৯ সালে যুক্তরাজ্যে কমিউনিটি পুলিশিং প্রথা চলু হয়। তাইতো ঘোষ প্রথা মুক্ত ইউরোপের লোকজন এতো সভ্য !! বাংলাদেশে এই ধারণার রুপকার বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান মহা পরিদর্শন (আইজিপি) একেএম শহীদলু হক। উৎসব মূখর কর্মশালা শেষে সকলকে নিয়ে ভোজন পর্বে মিলিত হন জয়দেব কুমার ভদ্র। সত্যিই বিরল এক অভিজ্ঞতা। কর্মশালায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার হেডিং শিরোনামে বলেন,কর্মজীবি প্রতিটি মানুষকে পারিবারিক দীক্ষায় প্রশিক্ষক হতে হয়। বিবেকের চেয়ে বড় শিক্ষক আর বিচারক হতে পারেনা। কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা লিখে ইতি টানব। এখানে পদাধিকার বলতে কিছু নেই। রাজনৈতিক মানদন্ডের স্থান নেই। স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধ দমন,সনাক্ত করণ,অপরাধীদের গ্রেপ্তার,আইন শৃংখলা রক্ষা,সমস্যা সমাধানে জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা ও যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের উপায় উদঘাটন ও বাস্তবায়নের কর্মকৌশলই কমিউনিটি পুলিশিং। পুুলিশের সনাতনী ইতিহাস বিবর্তনে সাংগঠনিক ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র তৈরী করা। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘ সময়েও কমিউনিটি পুলিশিং সাংগঠনিক কাটামোতে দাড়াতে পারেনি। এছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে পুলিশ ও জনগণের পরিস্কার ধারনার অভাব। বাস্তবিক অর্থে পুলিশিং কমিটির সফলতা জনগণের এক নিয়ামক শক্তি। এর জন্য প্রয়োজন পুলিশ বিভাগ এবং নির্মোহ,কর্মনিষ্ঠ,বিবেক সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর বাস্তব উপলব্ধি। জনগণের নিরাপত্তা,স্থিতিশীল আইন শৃংখলা এবং সত্য প্রয়াসী পুলিশ সুপারের কর্মপরিকল্পনায় শুভ কামনা। তাইতো,হৃদয় থেকে বলছি,জয়দেবের জয় হউক। ##

এম এ বাছিত
ষ্টাফ রিপোর্টার,দৈনিক মানবজমিন
বিশেষ প্রতিনিধি,হবিগঞ্জ জনতার এক্সপ্রেস
প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক
সোনার বাংলা একাডেমি এন্ড জুনিয়র হাইস্কুল
সাবেক সাধারন সম্পাদক,নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব
কুর্শি ইউপি,নবীগঞ্জ,হবিগঞ্জ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.