,

পৌর নির্বাচনে বাদ পড়ছে নয়া ভোটার

সময় ডেস্ক ॥ নতুন ভোটারদের বাদ দিয়ে পৌরসভা নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ২৪৬টি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ নতুন ভোটার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে হলে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে ৫ বছর। তবে পৌর নির্বাচন ডিসেম্বরে না করে ফেব্র“য়ারিতে করলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। কেননা ৩১ জানুয়ারির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। কিন্তু কমিশন তারও এক মাস আগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাচ্ছে। এর ফলে মেয়াদ শেষের দুই মাস আগেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হচ্ছে মেয়র ও কমিশনারদের। যদিও আইনানুযায়ী ৫ বছরের জন্য তারা নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নতুন ভোটারদের বাদ দিয়ে করতে গেলে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিলো। এবারও এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন, ‘ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আড়াইশোর মতো পৌরসভায় নির্বাচন হবে। কারণ, আইন অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। আইনে বলা আছে, মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।’ নতুন ভোটার বাদ প্রসঙ্গে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তারা এখনো ভোটার হননি। ৩১ জানুয়ারির পর তারা ভোটার হবেন। ফলে বিদ্যমান ভোটার দিয়েই নির্বাচন করতে হচ্ছে। কারণ ফেব্র“য়ারির মধ্যে আইন অনুযায়ী পৌরসভা নির্বাচন শেষ করতে হবে। কিন্তু ৩১ জানুয়ারির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ওই ভোটার তালিকা দিয়েতো ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক পৌরসভার নির্বাচন নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের পরেও সম্ভব। কিছু পৌরসভার মেয়াদ মার্চে শেষ হবে। তাছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণের আট বছর পর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজীর রয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন ভোটারদের নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে সেটা করা সম্ভব। কেননা এখানে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এই যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন এক-দুই সপ্তাহ পরে করলে অসুবিধা নেই। তাছাড়া ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার যে বিধান সেটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নয়। আইনের এই অংশ নির্দেশনামূলক, বাধ্যতামূলক নয়। ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত কয়েকটি ভোটার তালিকা হালনাগাদে সারাদেশে সাড়ে ৪ শতাংশ ভোটার বেড়েছে। আর প্রতি বছরেই নতুন ভোটার পাওয়া যায় ২৩ লাখের মতো। তবে দেশের ৩২৩টি পৌরসভায় প্রায় দেড় কোটি ভোটার রয়েছে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে যে ২৪৬টি পৌরসভার নির্বাচন করা হবে-সেখানে ভোটার আছে এক কোটির মতো। শতকরা সাড়ে ৪ জন ভোটার বাড়লে এককোটি ভোটারের মধ্যে নতুন ভোটার থাকবে সাড়ে ৪ লাখের মতো। একমাস আগে ইসির নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তের কারণে নতুন সাড়ে ৪ লাখ ভোটার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। পক্ষান্তরে আগামী মার্চে সারাদেশের ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ধাপে ধাপে নির্বাচন হবে। তাতে ১৫ লাখের মতো নতুন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। অথচ ২৫ জুলাই থেকে একইভাবে নতুন সব ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করার পরও সাড়ে ৪ লাখ ভোটার পৌরসভায় ভোট দিতে পারছেন না। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরেই হবে পৌরসভা নির্বাচন। বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়ে এ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গত ১৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পৌরসভাগুলোর আলাদা তালিকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ ও মেয়াদোর্ত্তীণের তারিখ দিয়ে ৩২৩টি পৌরসভার তালিকা দিয়েছে সরকার। এরমধ্যে ২০১১ সালে জানুয়ারিতে ২৪০টি পৌরসভার ভোট হয়েছে। সীমানা ও আদালতের আদেশে ১৩টি পৌরসভার নির্বাচন তখন হতে পারেনি। এবার এসব পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা নেই বলেও তালিকায় উল্লেখ করা হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভা বা কাছাকাছি সময়ে মেয়াদ শেষ হবে এমন পৌরসভার ভোটগ্রহণ দফায় দফায় না করে এক দিনে করার পরিকল্পনা করেছে ইসি। ২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২৮৫টি পৌরসভা নির্বাচন আয়োজন করেছিল। ওই বছরের ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে অধিকাংশ পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১২ জানুয়ারি ৭৭টি, ১৩ জানুয়ারি ৪৭টি, ১৭ জানুয়ারি ৪৫টি এবং ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। বাকী পৌরসভার নির্বাচন পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর ওই পৌরসভার প্রথমসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফেব্র“য়ারি-মার্চ মাসে। এ হিসাবে নভেম্বরের পর থেকে নির্বাচনী সময় শুরু হবে। মেয়াদের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এ বলা আছে, পৌরসভা গঠনের পর প্রথমসভার তারিখ থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত উক্ত পৌরসভার মেয়াদ থাকবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনে উল্লেখ রয়েছে, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে, উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে মেয়র ও কমিশনারদের পদত্যাগ করতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.