,

‘নতুন অভিজ্ঞতায় প্রথম দিন’

জাবেদ তালুকদার

আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পাশের পর ১ বছর ড্রপ দিয়ে নিজ শহরে অবস্থিত নবীগঞ্জ সরকারী কলেজের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলাম। রবিবার (২ মে) কলেজে আমার প্রথম ক্লাস ছিল। শিক্ষাজীবন শেষ করার অনেক আগেই প্রফেশনাল লাইফে প্রবেশ করাতে সারাদিনই ব্যবসা এবং অন্যন্য পেশাগত ব্যস্ততা লেগে থাকে। তাছাড়া রাতে পত্রিকা অফিসে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে প্রায়দিনই রাত ৩টা বেজে যায়, যেকারণে কলেজে ক্লাস করা নিয়ে নানা সংশয়ে ছিলাম। যাইহোক আগেরদিন রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম যত কষ্টই হোক প্রথম ক্লাসটা করবোই।
অফিসের কাজ শেষে রাত আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরলাম। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের জমজমাট ফাইনাল চলছিল, খেলা শেষে ঘুমাতে যাবো। কি যেন বাড়তি একটা এক্সাইটনেস কাজ করছিল। এক্সাইটনেসের অবশ্য কারণও আছে, এর আগে ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত শিক্ষাজীবনের সকল ধাপই বাড়ির পাশের দারুল হিকমাহ জামেয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় শেষ করেছি। কখনো এই প্রতিষ্ঠানের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করিনি।
নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবো কি? না চাইতেও এসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। প্রফেশনাল কারনে অনেক জটিল এবং বার্নিং ইস্যু খুব সুন্দরভাবে রিলাক্সে হ্যান্ডল করতে পারলেও এসব নিয়ে কেন এতো ভাবছি?! আল্লাহর রহমতে যেকোন মানুষের সাথেই আমি খুব সহজে ক্লোজ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, আশা করি কলেজেও পারবো। এসব ভাবতে ভাবতেই মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবের সুমধুর কন্ঠে ফজরের আজান কানে ভেসে এলো। নামাজ শেষে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, সম্ভবত ৬টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!
৮টা ১৫ মিনিটে এলার্ম বাজতেই ঘুম ভেংগে গেল। এতো সকাল আমাকে দেখে আম্মা যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারছেন না। কারন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও আমাকে ১২টার আগে বিছানা থেকে তুলা যায়না! যাইহোক গোসল সেরে হালকা নাস্তা করে এক বোনকে নিয়ে একসাথে কলেজে গেলাম!
বোনটা সম্পর্কে একটু বলে নেই, আত্নীয়তার সম্পর্কে খুব কাছের কেউ নয় কিন্তু আত্মার সম্পর্কে সে আমার অনেক আপনজনের চাইতেও আপন! আমার কোন বোন নেই বাট ওর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকে কখনোই বোনের অভাব টের পাইনি! বয়সে আমার কয়েকমাসের ছোট হলেও আমাকে অনেক সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে। পাশাপাশি বড় বোনের দায়িত্বটাও কঠোর হাতে পালন করে। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন সবকিছুর জন্য লক্ষ-কোটি শুকরিয়া আদায় করি। কোন বিষয়ের জন্য যদি আফসোস করি সেটা এই বোনকে নিয়েই, ও যদি আমার আপন বোন হতো!
প্রসঙ্গে ফেরা যাক, কলেজে গিয়ে দুজনে মিলে নিজেদের ক্লাস খুজে নিলাম। ক্লাসে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুদাসসির স্যার ক্লাসে এসে কুশল বিনিময় শেষে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করলেন। আলোচনাকালে স্যারের বাচনভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করলো। আলোচনার ফাকে সবার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি সহজ প্রশ্নও করছিলেন, প্রথম প্রশ্নের উত্তরটি আমি সফলভাবেই দিয়েছিলাম। এর আগে দুজন উত্তর দিলেও তাদের উত্তরটি ভূল ছিল। প্রশ্নটি খুবই সহজ ছিল, ক্লাস থ্রী/ফোরের শিক্ষার্থীও হয়তো এই উত্তরটা বলতে পারবে। আমি নিশ্চিত ক্লাসের সবাই এই বিষয়টি আমার চাইতে খুব ভালোভাবে জানে, হয়তো নার্ভাসনেসের কারনে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন! উত্তর দেওয়ার পর আমি ক্লাসে কিছুটা ইজি ফিল করতে শুরু করি। এরপর স্যার আরও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন, কয়েকটি উত্তর জানা থাকলেও ইচ্ছা করে বলিনি আমার অন্য সহপাঠীদেরকেও দেখতে চাইছিলাম। যাইহোক আমার আরো বেশ কয়েকজন সহপাঠী স্যারের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সুন্দরভাবে দিয়েছিলেন।
প্রথম ক্লাস শেষ করে কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম এবং তাদের ফ্রেন্ডদের সাথেও পরিচিত হয়ে নিলাম।
২য় ক্লাসে আসেন মাসুদ স্যার, পরিচিতি পর্ব শেষে ইংরেজির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করেন তিনি! স্যারের ক্লাসটি অনেক উপভোগ্য ছিল। স্যারের অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব এবং পড়ানোর দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করলো!
পরের ক্লাসে সালমা জাহান চৌধুরী ম্যাডাম বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করে প্রথমদিনের মতো ক্লাসের ইতি টানেন! একজন শিক্ষক হিসেবে ম্যাডামকে প্রথমদিনেই আমার অনেক ভালো লাগে।
প্রথমদিন বেশ কয়েকজন ছেলের সাথে আমার পরিচয় হলো, একসময় তারাই আমার ক্লোজ বন্ধু হয়ে উঠবে। সকল সহপাঠীদেরই আমার ভালোই লাগলো, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলাম।
কলেজে আমার সবচাইতে ভালো লেগেছিল চারপাশের সবুজ পরিবেশ। ক্লাস শেষে বোন ও নতুন এক সহপাঠীকে নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে অদ্ভুত এক অনুভূতি এবং স্মৃতিস্বরূপ কয়েকটি ফটো নিয়ে কলেজ থেকে ফিরলাম।
কলেজ থেকে অফিসে ফিরেই নিজের কাজে বসলাম, বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজেই ছিলাম, বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে মোবাইল হাতে নিয়ে ‘নতুন অভিজ্ঞতায় প্রথম দিন’ লিখলাম!
লেখা হয়ে গেলে হাতের কাজ শেষে ফ্রেস হয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার কাজে বসবো, হয়তো আজও রাত দুইটা পর্যন্ত অফিসে কাজ চলবে!
লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, যুগের হাওয়ায় তাল মিলাতে গিয়ে আবার পড়ালেখার তাল কেটে যাবে না তো! মনে মনে ঠিক করলাম, পড়ালেখা এবং আনন্দ দুটোকেই একসাথে উপভোগ করতে হবে!

জাবেদ তালুকদার

শিক্ষার্থী : ইংরেজি বিভাগ, নবীগঞ্জ সরকারী কলেজ


     এই বিভাগের আরো খবর