October 4, 2024, 12:35 pm

আগামী ৩ ডিসেম্বর আদালতের সিদ্ধান্ত কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটে ঘটনার বিবরন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটের বিষয়ে আগামী ৩ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত দিবেন হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তার। গত ১৩ নভেম্বর চার্জশিটটি দাখিল করেন সিআইডি সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল। চার্জশিটে কিবরিয়া হত্যাকান্ডের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো-চার্জশিটে বলা হয়- ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঈদ পুনর্মিলনী ও রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য শাহ এএমএস কিবরিয়া উপস্থিত থাকবেন। এমন সংবাদ পাওয়ার পর শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারের বদরুল আলম মিজানকে উক্ত সভায় গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা কিবরিয়াকে হত্যা করার জন্য হাফেজ নিমুর নিকট হতে গ্রেনেড আনার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মোতাবেক ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি বদরুল আলম মিজান তার নিজের লাল রংয়ের মোটর সাইকেলটি ভগ্নিপতি মাওলানা কুতুব উদ্দিনের বাসা হতে সংগ্রহ করে। উক্ত মোটর সাইকেলে তার পরিচিত রুহেল মাস্টারকে নিয়ে সুনামগঞ্জস্থ হাফেজ নিমুর দোকানের নিকট যায় এবং দোকান হতে অনতিদূরে মোটর সাইকেলসহ রুহেল মাস্টারকে দাঁড় করে রাখে। বদরুল আলম মিজান হাফেজ নিমুর নিকট হতে ১টি গ্রেনেড গ্রহণ করে এবং উক্ত গ্রেনেডটি হেফাজত করে মোটর সাইকেলের নিকট আসে। অতঃপর রুহেল মাস্টারকে গ্রেনেডটির কথা না জানিয়ে তাকে গ্রেনেডসহ ব্যাগটি রাখার জন্য প্রদান করে এবং বদরুল আলম মিজান মোটর সাইকেল চালিয়ে হবিগঞ্জ চলে আসে। হবিগঞ্জস্থ উমেদনগর টাইটেল মাদ্রাসার কাছে এসে রুহেল মাস্টারকে চলে যেতে বলে। রুহেল মাস্টার জিদ ধরে যে, সে এতক্ষণ যে জিনিসটা বহন করেছে সেটা কি? তখন মিজান রুহেলকে নিয়ে উমেদনগর মাদ্রাসার দোতলায় যায় এবং রুহেলকে গ্রেনেডটি দেখায়। পরবর্তীতে বদরুল আলম মিজান গ্রেনেডটিসহ তার বাসা চৌধুরী বাজারে যায় এবং তার রুমের একটি ট্রাংকে তার বই খাতার মধ্যে গ্রেনেডটি রাখে। এর ৪/৫ দিন পর মিজান বেলা ১১টার সময় ১; মিজান (মিঠু), ২; মোহাম্মদ আলী, ৩; বদরুল দেরকে মোবাইল করে উমেদনগর মাদ্রাসায় আসতে বলে এবং ৪ জনে চৌধুরী বাজার বানিয়াচঙ্গ হোটেলে বসে বৈদ্যের বাজারে শাহ্ এএমএস কিবরিয়ার সভায় গ্রেনেডটি মারবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বেলা ৩টায় উমেদনগর মাদ্রাসা হতে বদরুল আলম মিজান ও মোহাম্মদ আলী মোটর সাইকেলে বৈদ্যের বাজার যায়। বৈদ্যের বাজারে সভার কাছাকাছি জায়গায় তারা একত্রিত হয় এবং তারা মোটর সাইকেলটি অস্থায়ী চা স্টলের পাশে রাখে। একই সময় হারিছ চৌধুরী ও অচেনা একজন একটি নীল রংয়ের মোটর সাইকেলে এসে অস্থায়ী চা স্টলের পাশে রাখা লাল মোটর সাইকেলের পাশে তাদের মোটর সাইকেল রাখে। হারিছ চৌধুরী লাল রংয়ের মোটর সাইকেলে আসা লোকদের সাথে কথা বলেন। এরপর হারিছ চৌধুরী ও অচেনা লোকটি কিবরিয়া মিটিং শেষ হবার ২০/৩০ মিনিট পূর্বে উক্ত নীল রংয়ের মোটর সাইকেলে করে চলে যায়। ১; বদরুল আলম মিজান, ২; মোহাম্মদ আলী, ৩; বদরুল ওরফে মোহাম্মদ বদরুল, ৪; মিজানুর রহমান মিজান ওরফে মিঠু একত্রে বৈদ্যের বাজার মসজিদে নামাজ পড়ে। নামাজ পড়ে এসে বদরুল আলম মিজান গ্রেনেডের প্যাকেট হতে গ্রেনেড বের করে মোহাম্মদ আলীর হাতে দিয়ে কিভাবে ছুড়তে হবে দেখিয়ে দেয়। মিঠুকে রাস্তার পশ্চিম পাশে দাঁড়াতে বলে এবং বদরুলকে রাস্তার পূর্ব দিকে দাঁড়াতে বলে দেয়। সভার কাছাকাছি মোটর সাইকেলসহ বদরুল মিজান দাঁড়িয়ে থাকে। এমন সময় মোহাম্মদ আলী মিজানের কাছে যায় এবং সে গ্রেনেড ছুড়তে পারবে না বলে জানালে বদরুল আলম মিজান গ্রেনেডটি নিয়ে নেয় এবং সন্ধ্যা অনুমান ৭টার দিকে জনসভা শেষ হওয়ার পর বদরুল আলম মিজান শাহ্ এএমএস কিবরিয়াকে গেইটে দেখার সঙ্গে সঙ্গে কিবরিয়াকে লক্ষ্য করে ঙ্গ্রেনেডটি ছুড়ে মারে। পরে বিকট আওয়াজ হয় ও তখনই বিদ্যুত চলে যায় এবং বদরুল আলম মিজান ঘটনাস্থল হতে দৌঁড়ে মোটর সাইকেলের কাছে আসে এবং মোহাম্মদ আলীসহ দ্রুত মোটর সাইকেলে হবিগঞ্জ চলে যায়। গ্রেনেড বিস্ফোরণের ফলে শাহ্ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন এবং তেতাল্লিশ জন আহত হয়। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গউছের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ: চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়- ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল মুফতি আব্দুল হান্নান এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৩ সালের শেষের দিকে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বেইলী রোডস্থ সরকারি বাসায় অপরাপর আসামীদের সাথে মেয়র জি.কে গউছ ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে লুৎফুজ্জামান বাবর সিলেটে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করার নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশের প্রেক্ষিতে তাদের সহায়তায় কিবরিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। গ্রেনেডের উৎপত্তিস্থল ঃ চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়- মাওলানা তাজ উদ্দিন আর্জেস গ্রেনেড পাকিস্তান থেকে সংগ্রহ করে আনেন। উক্ত গ্রেনেড কাশ্মীর যুদ্ধে প্রেরণের জন্য সংগ্রহ করে রেখেছিল। কিন্তু সীমান্ত পাহারা জোরদার থাকায় গ্রেনেড পাচার করতে পারেনি তারা। পরে ৩২টি গ্রেনেড তাজ উদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নেয় হুজি নেতা মুফতি হান্নান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল তা ওই ৩২টি গ্রেনেড থেকে সরবরাহ করেছিল মুফতি হান্নান। এর মধ্য থেকে সিলেট অঞ্চলে প্রেরণ করে ৯টি গ্রেনেড। এর মধ্যে একটি গ্রেনেড ব্যবহার করা হয় কিবরিয়া হত্যাকান্ডে। অন্য গ্রেনেডগুলো দিয়ে সিলেট শাহ্জালাল (রহঃ)-এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর, তৎকালীন এমপি জেবুন্নেছা হক, তৎকালীন সিলেট সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। কিবরিয়া পরিবারের মতামত: কিবরিয়া হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলমগীর ভূইয়া বাবুল জানান, সম্পূরক চার্জশিটে বাদীপক্ষের কোন আপত্তি নেই। তবে কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া ও ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বর্তমানে আমেরিকা থাকায় তাদের মতামত বলা যাচ্ছে না। কয়েকদিনের মধ্যে তারা আমেরিকা থেকে ফিরে এসে চার্জশিটের বিষয়ে তাদের মতামত প্রদান করবেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.