ময় ডেস্ক ॥ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেছেন, চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে সৃষ্ট সন্ত্রাসের কারণে সংঘটিত হতাহতের ঘটনা ছিল অভূতপূর্ব। নাগরিক সমাজ অস্বাভাবিক এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি চায় না। গতকাল বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানকল্পে সংবিধানের কিছু সংশোধনী ও বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। এসব সংস্কার প্রস্তাব বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। নাগরিক সমাজের প্রস্তাবে বলা হয়- বাংলাদেশের সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়ের সংস্কার হওয়া দরকার। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- প্রেসিডেন্টের পূর্ণ স্বাধীনতা, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের পদ্ধতি, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য, নির্বাচন পদ্বতি সম্পর্কে নতুন ভাবনা, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভূমিকা সুষ্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে সেগুলো পরিচালনের জন্য উপযুক্ত আইনি বিধান, সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা রেখে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, ক্ষমতা ও সম্পদ হস্তান্তর এবং সেই লক্ষ্যে কার্যকর আইনি বিধান, সংসদীয় আসনের ভোটারগণ কর্তৃক তাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে প্রত্যাহারের বিধান, সংবিধানের ৭০ ধারায় দলীয় সংসদ সদস্যদের সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোট প্রদানে যে বাধা আরোপিত আছে তা রহিতকরণ এবং জাতীয় ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির ওপর গণভোট গ্রহণের আবশ্যিক বিধান। এছাড়া নাগরিক সমাজ মনে করে, রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পুনরুজ্জীবিত ও শক্তিশালী করা এবং এগুলোকে সকল ধরনের দলীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠান যে কোনো গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো বিনির্মাণের অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ। রাষ্ট্রের বিভিন্ন শাখার নিম্নোক্ত সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহ সংস্কারের জন্য নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এগুলো হলোÑ জাতীয় সংসদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নাগরিক সমাজের প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- দেশের বিদ্যমান সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসনকল্পে একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা। আমরা এই পৌনঃপুনিক সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চাই এবং তা করা দরকার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে। নয়তো আমাদের আশঙ্কা যে, এই নির্বাচনী গণতন্ত্রের উৎপীড়ন আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার এক স্থায়ী দুষ্টক্ষততে পরিণত হবে। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, এম.হাফিজ উদ্দিন খান, কলামিস্ট ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর প্রমুখ অংশ নেন।
Leave a Reply