,

মেয়ে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বাবা

আলোচিত বিউটি ধর্ষণ ও হত্যার নতুন মোড়

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নতুন মোড় নিয়েছে শায়েস্তাগঞ্জের আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যাকান্ডের তদন্ত। প্রথমে মামলার প্রধান আসামি বাবুলকে সন্দেহভাজন খুনি বলে ধারণা করা হলেও পরে উঠে এলাকা সম্পর্কের চাচা ময়না মিয়ার নাম। সর্বশেষ জানা গেল, বাবা ছায়েদ আলীর উপস্থিতিতেই নাকি বিউটিকে হত্যা করেছে ময়না মিয়া ও এক ভাড়াটে খুনি। গতকাল শনিবার বিকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। তিনি আরো বলেন, ‘বাবুল নয়, বিউটির প্রকৃত হত্যাকারী তার কথিত চাচা ময়না মিয়া। ‘ধর্ষক’ বাবুলকে ফাসাতে নিজের মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা তিনি নিজেই করেন। বিউটিকে হত্যার সময় তার বাবা ছায়েদ পাশেই দাড়িয়ে ছিল। এ সময় পেশাদার ভাড়াটে এক খুনি বিউটির হাত-পা চেপে ধরে রাখে। আর ময়না মিয়া বিউটির শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।’ এর আগে মেয়ে বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় নিজেই জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের বাবা ছায়েদ আলী। গতকাল শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ছায়েদ আলীকে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ছায়েদ আলী নিজেই অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। হত্যার রাতে নিজেই নানাবাড়ি থেকে বিউটিকে নিয়ে এসেছিলেন। জবানবন্দিতে কী বলা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সায়েদ আলীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে বিউটি হত্যার আদ্যোপান্ত আদালতে বর্ণনা করেন তিনি। এছাড়া ঘটনার অন্যতম হোতা আওয়ামী লীগ নেতা ময়না মিয়ার প্রথম স্ত্রী আছমা আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগে গত শুক্রবার বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আদালতে বিউটির চাচা ময়না মিয়া হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। এছাড়া সেই বাবুল মিয়াও অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পাশাপাশি বিউটির নানী ফাতেমা বেগমের জবানবন্দিও আদালত রেকর্ড করেছেন। সূত্র জানায়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা  গ্রামের ছায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে (১৬) গত ২১ জানুয়ারি ধর্ষণের অভিযোগ উঠে একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান বিবির ছেলে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ছায়েদ আলী। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় ছায়েদ আলীর ঘনিষ্ট আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে নানার বাড়িতে। অভিযোগ উঠে, গত ১৬ মার্চ রাতে ‘সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি’। পরদিন ১৭ মার্চ গুণিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ। এ ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির বাবা ছায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও। হত্যাকান্ডের ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে সারাদেশ। পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তিনি মোটিভ উদঘাটনে সম হন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের মেম্বার পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন আওয়ামীলীগ নেতা ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার ও বাবুলের মা কলম চান বিবি। নির্বাচনে বাবুলের মা কলম চান বিবির কাছে পরাজিত হয় ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার। এর পর থেকেই উভয় পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছে। এরই জেরধরে বিউটিকে অপহরণের পর ধর্ষণের ঘটনায় মামলায় স্বাক্ষী হয় ময়না মিয়া। মামলায় আসামী করা হয় বিজয়ী মেম্বার কলম চান বিবি ও তার পুত্র বাবুল মিয়াকে। পরে এ সুযোগে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে এবং বিউটিকে ঘৃণ্য গ্রাম্য রাজনীতির বলি বানাতে  হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।


     এই বিভাগের আরো খবর