March 23, 2025, 4:41 am

ছাত্র বহিস্কারের ঘটনায় মিরপুর কলেজ উত্তপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ আর বহিস্কারে এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলার মিরপুর আলিফ সোবহান চৌধুরী ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে অবরোদ্ধ ও ৩ ছাত্রকে বহিস্কারের ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কলেজে ডিগ্রী কোড না থাকা সত্বেও সরকারী অংশের (এমপিও) টাকা ভোগ করার অভিযোগে দুদুকের মামলায় ৬ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রাক্কালে উদ্ভোদ ঘটনা শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ হুমকীর মুখে ফেলেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ আর বহিস্কারের কারণে এলাকায় বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। এছাড়া কলেজের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ দুইজন শিক্ষক সাংবাদিকদের প্রতি বিষোদগার করেছেন। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কলেজ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর শনিবার হবিগঞ্জ নিউফিল্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল কারার লক্ষ্যে কলেজের ৪০ জন স্কাউটসহ দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়। ওই দিনের টেষ্ট পরীক্ষা স্থগিত করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানসহ সকল শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের নিয়ে রিজার্ভ বাসযোগে জনসভায় অংশ নেন। জনসভা শেষে ফেরার প্রাক্কালে ভিড়ের চাপে পড়ে অনেক ছাত্রী তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যানেটি ব্যাগ, পড়নের ওড়না ও জুতা হারায়। অনেকে আবার শারিকভাবেও লাঞ্চিত হয়। এ ঘটনাটি লজ্জাজনক ও স্পর্শকাতর হওয়ায় কোন কোন ছাত্রী তাদের সহপাঠি ছাত্রদের জানায়। এসব বিষয় কোন কোন ছাত্রও প্রত্যক্ষ করে। এমনকি ২য় বর্ষের এক ছাত্রীর ছোট দুই ভাই জনসভা থেকে ফেরার সময় হারিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হবিগঞ্জ সদর থানায় মৌখিকভাবে অবহিত করার সময়ই তাদেরকে হবিগঞ্জ পৌদ্দার বাড়ি এলাকায় পাওয়া যায়। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শিক্ষার্থীদের হবিগঞ্জ নিলেও তাদেরকে সারাদিনে খাওয়ানো হয় ডাইল-রুটি। ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাত সাড়ে ৭টা-৮টায় শিক্ষকগণ মিরপুর ফিরেন। বিলম্বে আসায় অনেক অভিভবাক ও সাধারণ শিক্ষার্থী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্রতি ক্ষিপ্ত হন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ছাত্রীদের মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও জুতা হারানোর ঘটনা জানতে পেরে দু-একজন অভিভাবক প্রকাশ্যে অধ্যক্ষের প্রতি চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হন। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েক ছাত্রী জানান, রোষানল থেকে বাচতে অধ্যক্ষ একাধিক শিক্ষার্থীকে ওড়না কিনে দিয়ে বাড়ি পাঠান। এদিকে পরদিন রবিবার সকাল ১০টার পূর্বে স্থগিত হওয়া গভর্নিং বডির সভা চলাকালে শতাধিক ছাত্র আগের দিনের ঘটনার জবাব দেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্রতি দাবী জানায় এবং কলেজে মিছিল করে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এসময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ঘন্টাখানেক অবরোদ্ধ করে রাখে। অবস্থা বেগতিক দেখে সভায় উপস্থিত গভর্ণিং বডির সভাপতি এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে বাহুবল থানার এস.আই খায়রুজ্জামান ও এস.আই গৌরাঙ্গের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে পুলিশের উপস্থিতির মাধ্যমেই গভর্ণিং বডির সভা ও পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ছাত্রীদের মোবাইল হারানোসহ স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লজ্জায় প্রকাশ্যে কিছূ বলতে চান না সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। এ ধরণের ঘটনার জের ধরে ২য় বর্ষের ছাত্র মাহবুব, আরিফ ও তামিমকে বহিস্কার করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রথমদিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বহিস্কারের বিষয়টি গোপন রাখেন। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ক্ষোভের সাথে জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কলেজের কর্তৃত্বের জন্য চেষ্ঠা চালাচ্ছে। ইদানিং কলেজটি অনার্সসহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রুপান্তরিত হওয়ায় ঈর্ষন্বিত হয়ে ওই মহলটি ছেলেদের উস্কে দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান রক্ষার স্বার্থে কুচক্রি মহলকে ছাড় দেয়া হবেনা। বাহুবল মডেল থানার ওসি আলী ফরিদ আহমদ জানান, কলেজের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সামাজিক পর্যায়ে নিস্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে কলেজে ডিগ্রী কোড চালু না থাকার পরও এমপিও‘র টাকা ভোগ করার দায়ে ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদুক। এ মামলার আসামীরা হচ্ছেন, আফতাব উদ্দিন-ইসলামের ইতিহাস, ফাতেমা ইয়াসমিন-দর্শন, শাহিন মিয়া-দর্শন, আলী হায়দার-অর্থনীতি, ছাদিকুর রহমান-বাংলা, অনুপম ভদ্র-রাষ্ট্রবিজ্ঞান। আগামী সপ্তাহে দুদুক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.