,

নবীগঞ্জের গন্ধ্যা গ্রামে অজানা আতংক বিরাজ করছে জ্যোৎস্নার দাফন সম্পন্ন এলাকায় শোকের মাতম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্ধা গ্রামের পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজানের বাড়ীর সীমানা প্রাচীরে ঝুলন্ত জ্যোৎস্না বেগম (৩৫) এর লাশ ময়না তদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল শান্তিশাহ এলাকায় পৌছুলে নিহতের পরিবার পরিজনসহ কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এসময় তাদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। রাতেই জ্যোৎস্না বেগমের যানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের পরিবার জ্যোৎস্নার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি করেছে। এলাকাবাসী বলেন, জ্যোৎস্না বেগমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে পৌর এলাকার গন্ধ্যা গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে। কেউ ভয়ে মুখ খোলে কথা বলতে চাইছে না এবং সন্ধার পর পরই গ্রাম নিঃস্তব্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ জ্যোৎস্না বেগমকে হত্যা করা হয়েছে কিনা না সে আতœহত্যা করেছে তা উদঘাটনে সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে এগুচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। জ্যোৎস্নার মা ফুলেন নেছা বেগম তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে দাবি করে বলেন, জ্যোৎস্না পড়ালেখা জানে না, সে কিভাবে চিরকুট লিখবে। নিহতের পরিবার থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। ‘জ্যোৎস্না বেগম পড়া লেখা জানে না সে কিভাবে চিরকুট লিখবে’ জ্যোৎস্নার মায়ের এমন বক্তব্যে ঘুরপাক খাচ্ছে জ্যোৎস্নাকে পৌর কাউন্সলর মিজানুর রহমান মিজানের প্রতিপক্ষরা হত্যা করে মিজানকে ফাসাতে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশার মহিবুর রহমানের পরিত্যক্ততা স্ত্রী ৬ সন্তানের জননী জ্যোৎস্না বেগম আনসার ও ভিডিপির মহিলা নেত্রী হিসাবে ঢাকায় ৪২ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ৩০ নভেম্বর বাড়ী ফিরে। অপর আনসার সদস্য নবীগঞ্জের কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের রানীগাঁওয়ের ছায়েব আলীর মেয়ে জাহেদা বেগমের সাথে তার পরিচয় ঘটে। পরিচয়ের সুবাদে জাহেদা বেগম গার্মেন্টসে চাকুরীর কথা বলে ৫ ডিসেম্বর জ্যোৎস্নাকে ঢাকা নিয়ে যায়। বুধবার ছিল জ্যোৎস্নার চাকুরীতে যোগদানের কথা। কিন্তু জ্যোৎস্না কিভাবে নবীগঞ্জে গেল, লাশ হলো এনিয়ে জ্যোৎস্নার পরিবার হতবম্ব। এদিকে মিজানুর রহমান মিজান সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত বাড়ীতে অবস্থান করেও হবিগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার নবীগঞ্জে পৌছার পূর্বে বাড়ী থেকে পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহের তীর তার দিকে। জ্যোৎস্না ও জাহেদার সাথে মিজান কিংবা মিজানের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল দাবি করছেন। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে গন্ধ্যায় জ্যোৎস্নার মৃত্যুর ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ায় নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ছিল ঠক অব দ্যা টাউন। উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজানের বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের সাথে ঝুলন্ত মহিলার লাশের খবরে উৎসুক জনতার ভীড় জমে। পৌর সভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ব্যবসায়ীসহ শত মানুষ বাড়ীতে যায়। অপরিচিত মহিলার নাম পরিচয় কেউ সনাক্ত করতে পারেনি। অবশেষে সুরতহাল তৈরীকালে পুলিশের নজরে আসে চিরকুটটি। তাতে তার ঠিকানা গ্রাম উছাইল ও নাম জ্যোৎস্না বেগম লেখা ছিল। ওসি তদন্ত গৌর চন্দ্র মজুমদার তদন্তের স্বার্থে চিরকুটে আর কি লিখা আছে তা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। মিজানুর রহমান মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসা হবিগঞ্জ সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ নাজমুল ইসলাম ও নাবাগত পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান বিকাল পৌনে ৩ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও মিজানুর রহমান মিজানের দেখা না পেয়ে বিফল হয়ে হবিগঞ্জে ফিরতে হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.