,

খালেদা জিয়া সফরে থাকায় দল পুনর্গঠন কাজে স্থবিরতা

সময় ডেস্ক ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দুই মাস থেকে অবস্থান করছেন। চলতি মাস কিংবা আগামী মাসেও যে তিনি দেশে ফিরবেন-এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিএনপির নেতাদেরও কেউ এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ বলছেন না। অন্যদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার দেশে না ফেরায় বিএনপির পুনর্গঠনের কাজ আটকে আছে। আটকে আছে ঢাকা মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড-থানা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজেও গতি নেই। সব মিলিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং, দিবসভিত্তিক কর্মসূচি আর চার দেয়ালের ভেতরে আলোচনা সভা ছাড়া দলের কোনো তৎপরতা নেই। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সময় বাড়ানো হলেও সম্প্রতি তা নিয়ে কোনো কর্মকান্ড নেই বিএনপির। গত ১৫ জুলাই খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন সফরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তবে তিনি কবে ফিরবেন, তা নিয়ে তখনো মুখ খুলেনি বিএনপি। নেতারা জানান, এটা বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সফর। চিকিৎসা শেষ করেই তিনি সুবিধাজনক সময়ে দেশে ফিরবেন। তাই এ নিয়ে বিএনপির কোনো নেতাকে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) দেশে ফেরা নির্ভর করছে তার চিকিৎসার ওপর। যখনই চিকিৎসা শেষ হবে তখনই তিনি দেশে ফিরবেন। এ নিয়ে সরকারের মধ্যে তাড়া থাকলেও আমাদের মধ্যে তাড়া নেই।’ তবে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া হয়তো আটকে আছে। দলীয় প্রধান হিসেবে কমিটিতে ম্যাডামের অনুমোদনের দরকার আছে। এর বাইরে সব কাজ তো মোটামুটি ভালোই চলছে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে বন্যা হওয়ায় এবং রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সময় দেয়া যাচ্ছে না। নেতাকর্মীরা এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার সদস্য সংগ্রহ অভিযান পুরোদমে শুরু হবে।’ আর বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বলেন, ‘ম্যাডামের চিকিৎসা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে দেশে ফেরা নিয়ে কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রাম শেষেই তিনি দেশে ফিরবেন। কবে ফিরবেন, তা নিয়ে কোনো দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।’ বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য অপেক্ষায় আছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। প্রায় দেড় বছর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের দিয়ে কেবল বিবৃতি তৈরির কাজ চলছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নতুন কমিটির অপেক্ষায় আছেন পদপ্রত্যাশীরা। এ জন্য তারা খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় আছেন। জানতে চাইলে ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পরামর্শ করেই ছাত্রদলের নতুন কমিটি নির্ধারণ করবেন। ম্যাডাম দেশে ফিরেই কমিটি দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি দেশে না ফেরায় সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কোনো কর্মসূচি নেই, আছে শুধু বিবৃতি।’ এ ছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও আটকে আছে। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। ম্যাডাম দেশে ফিরলেই একটি খসড়া তালিকা দেয়া হবে। তিনি কমিটি অনুমোদন করবেন।’ আর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রায় হয়ে গেছে। কিছু টেকনিক্যাল কারণে এখনই বলা যাচ্ছে না। ম্যাডাম দেশে ফেরার অল্প দিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটি গঠনের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ছে। অবশ্য বিএনপির অপর একটি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ দেখেই নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে তিনি দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সুষমা স্বরাজের সাথে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর আগেও তিনি হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করনে। এবার তিনি সুষমার সাথে একান্তে আলাপ করতে চান। এ জন্য লন্ডন থেকেই বিজেপির নেতাদের সাথে বিএনপির কয়েকজন নেতা যোগাযোগ করছেন বলে একটি সূত্র জানায়। অবশ্য এসব বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানান বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। বর্তমানে লন্ডন অবস্থানরত বিএনপির এই নেতা বলেন, চিকিৎসা শেষ হলেই সুবিধাজনক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর