,

সদর হাসপাতালে রোগীদের খাবার নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নানা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন আগত সেবা প্রত্যাশীরা

জুয়েল চৌধুরী :: হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীদের খাবার নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের এক মাত্র চিকিৎসার প্রধান আশ্রয়স্থল হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল। সম্প্রতি হাসপাতালটি ১’শ শয্যা থেকে ২’শ ৫০ শয্যা এবং ডাক্তারসহ সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হলেও বাড়েনি চিকিৎসার মান। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সেবা প্রত্যাশীরা এ হাসপাতালে এসে শিকার হন নানা প্রতারণার। কোন ভাবে ভাগ্যক্রমে ভর্তি হলেও জুটে না ভাল বিচানা, ভাল খাবার-দাবার। খাবারের তালিকায় মাছ, মাংস দুধ, ডিম ও কলাসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাদ্য থাকলেও তা সঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন ওই সব রোগীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ৩ বার করে ২৫০ জন রোগীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা কথা। প্রতি রোগীর জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়েছে দিন প্রতি ১২৫ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে, ২৪০ গ্রাম চাউল, ১৫০ গ্রাম মাছ অথবা মাংস, ১৫ গ্রাম তেল এবং ১৫ গ্রাম ডাল, পাউরুটিসহ অন্যান্য খাবার। অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানটি দেড়শ শয্যার বাইরে কোন রোগীকে খাবার দেন না। আবার যে খাবার দেয়া হচ্ছে তাও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও যে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে তা অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধযুক্ত। তাই এনিয়ে সাধারণ রোগীও তাদের সাথে আসা স্বজনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। গতকাল বুধবার দুপুরে তা সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্রই লক্ষ্য করা যায়। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী (বেডে থাকা)   আলকাছ আলী জানান, তিনি অসুস্থ্য হয়ে ৪ দিন যাবত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা নামে মাত্র। তিনি আরো জানান, এক টুকরো মাছ আর খানিকটা ঝুল সাথে সামান্য সবজি আর অল্প পাতলা ডাল দিচ্ছে হাসপাতাল থেকে। তাও আবার সবসময় পান না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সখিনা আক্তার নামে অপর আরেক রোগী জানান, হাসপাতালের দেয়া খাবার খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভাল। যে অল্প খাবার দেয় তাও স্বাস্থ্যসম্মত না। একদিনের বাসি সবজি আরেক দিন দেয়। আর একদিনের মাছের তরকারি দিয়ে তারা দুই তিন দিন চালিয়ে দেয়। তাই এ খাবার খেলে রোগ সারাতে এসে আবারো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই তিনি প্রতিদিন বাহির থেকে খাবার এনে খাচ্ছেন বলেও জানান। আব্দুল কাইয়ুম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি তার এক আত্মীয়কে নিয়ে দুই দিন যাবত হাসপাতালে রয়েছেন। দুই দিন পার হয়ে গেলেও বেড পাননি তার রোগী। তাই প্রতিদিন খাবার নিয়ে কর্মীরা আসলেও তার রোগীর বেড না পাওয়ায় তাকে খাবার দেয়া হচ্ছে না। তিনি আরো জানান, খাবার পরিবেশন করা কর্মীরা তাকে জানিয়েছেন বেডের বাইরে কোন রোগীকে খাবার দেয়া হয় না। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বেডের (সিট) এর বাইরে থাকা দেড়শ’ জনকে প্রতিদিন খাবার দেয়ার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, রোগীরা হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার জন্য আসলেও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের ফলে তারা সবসময় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। অনেক সময় খাবারে বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় ভেসে থাকতে দেখে অনেক রোগীরা এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করে। তবে আমরা এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বললেও তারা তাতে কর্ণপাত করে না। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ রতীন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, নিয়ম অনুযায়ী ২৫০ জন রোগীকেই প্রতিদিন তিন বার করে খাবার দিতে হবে। এছাড়াও তারা যদি খাবারে কোন প্রকার অনিয়ম দূর্নীতি করে তা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো জানান, আড়াইশত রোগীর মধ্যে ১ শত জন রোগীকে খাবার দেয়া হয় বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্ত¡াধিকারী আজিজুর রহমান আজিজের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।


     এই বিভাগের আরো খবর