,

খোয়াই নদীর উচ্ছেদ শুরু হতে না হতেই ডিসির বদলি

স্টাফ রিপোর্টার :: হবিগঞ্জের ডিসি মাহমুদুল কবির মুরাদ এর হঠাৎ করেই বদলির খবরে হতাশ হবিগঞ্জ জেলার মানুষ। তাদের ধারণা, এতে ব্যাহত হতে পারে খোয়াই নদী পাড়ের উচ্ছেদ অভিযান। তাদের দাবী, প্রায় ৩০ বছরের জঞ্জাল অপসারনের কঠিন এক যুদ্ধে নেমেছিলেন তিনি। তবে মাঝ পথে, অসময়েই চলে যেতে হচ্ছে তাকে। এতে ভঙ্গ হতে পারে নান্দনিক শহর গড়ার স্বপ্ন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই প্রশাসকের নির্দেশে শহরের শায়েস্তানগর ও মাহমুদাবাদ এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদী তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ পর্যন্ত অভিযান চলমান রয়েছে। এ অভিযানটি শুরু হতে না হতেই হঠাৎ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের বদলিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না হবিগঞ্জের সাধারণ মানুষ। কারণ, হবিগঞ্জের পরিবেশ রক্ষায় পুরাতন খোয়াই নদী পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ছিল সাধারণ মানুষেরই চাওয়া। হবিগঞ্জের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে আসা উপ-সচিব মাহমুদুল কবির মুরাদকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক করা হয়েছে। হবিগঞ্জের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোঃ কামরুল হাসান। গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়নের স্ক্যাচম্যাপ তৈরি করে। প্রাথমিক পর্যায়ে সদর হাসপাতাল থেকে নাতিরাবাদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ৩১৫ মিটার পুরাতন খোয়াই নদীকে সংস্কার করে নান্দনিক করার কথা রয়েছে। অনেকটা ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পের আদলে এটি করা হবে। নদীর দুপাড় উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ, দুই তীরে রাস্তা, ৫টি ব্রীজ নির্মাণ ও গাছ লাগানো হবে। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ পৌরসভা সেখানে পার্ক ও শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করবে। এ প্রকল্পের আওতায় পুরাতন খোয়াই নদীর দুপাড়ে প্রশন্ত ওয়াকওয়ে, ওয়াটার পিউরিফিকেশন পাম্প স্থাপন, পর্যটকদের জন্য বোটিং ব্যবস্থা, এলইডি সড়কবাতি স্থাপন ও শিশুদের জন্য কিডস কর্নার করা হবে। সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলা শহরকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৬ সাল থেকে দুই দফায় মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর পর্যন্ত খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালে মাছুলিয়া থেকে রামপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং ১৯৭৮-৭৯ সালে রামপুর থেকে কামড়াপুর গরুর বাজার পর্যন্ত আরও দুই কিলোমিটার গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এরপর থেকে নদীর পুরনো অংশটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আর এ ফাঁকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ নানা পেশার মানুষ নদীর পুরনো অংশটি দখলে নিতে থাকেন। এক সময় নদী অস্তিত্ব হারিয়ে কোথাও খাল, আবার কোথাও ড্রেনে পরিণত হয়। ডিসি মাহমুদুল কবীর মুরাদ অবৈধ দখল উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি হবিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে তিনি বিরাট ভূমিকা পালন করেন। এসব ছাড়াও তিনি সুন্দর হবিগঞ্জ গঠনে হাওর, পাহাড় রক্ষায় কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ সময়েই তার বদলির আদেশ হলো। এ ছাড়াও তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ার নদীর ভাঙন রোধে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বন্যার সময় তিনি বন্যা কবলিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন। তার বদলির খবরে তারাও খুবই হতাশ। জেলার পরিবেশ কর্মী তোফাজ্জল সোহেল জানান, বদলীর খবরটি ছিল হবিগঞ্জবাসীর কাছে অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। সকলের ধারণা ছিল, তার হাত ধরেই শেষ হবে পুরাতন খোয়াই নদীর উচ্ছেদ অভিযান, পুরণ হবে নান্দনিক শহর গড়ার স্বপ্ন। তিনি জানান, এখন উচ্ছেদ অভিযানের ভবিষ্যত নিয়ে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও শংকিত। এ বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন জানান, বদলীর খবরে সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। পুরাতন খোয়াই নদীর উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সকলের মনেই হতাশা নেমে এসেছে। তিনি জানান, উচ্ছেদ অভিযানটি সরকারের নির্দেশে হলেও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল করিব মুরাদের আন্তরিকতা ছিল প্রশংসনীয়। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জেলা জজ কোর্টের আইনজীবি সায়লা খান জানান, মাহমুদুল কবির মুরাদ নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। ভালো মানের গীতিকার, সর্বোপরি একজন ভালো জেলা প্রশাসক। অল্পসময়ে তিনি হবিগঞ্জবাসীর জন্য অনেক ভালো কিছু করেছেন। যা হবিগঞ্জবাসী সারাজীবন মনে রাখবে। জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিক মাপের জাতীয় পতাকা বিতরণ করে এক অন্যন্য নজীর স্থাপন করেছেন তিনি।  সফল হয়েছেন বাইপাস সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে। স¤প্রতি হবিগঞ্জবাসীর বহু কাক্ষিত পুরাতন খোয়াই নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে রীতি মত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আরো কিছু সময় পেলে হয়তো সুন্দর একটা শহর উপহার দিতে পারতেন তিনি।


     এই বিভাগের আরো খবর