,

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীর খাবারের টাকা ঠিকাদার কর্তৃক আত্মসাতের অভিযোগ

শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস ব্যবস্থাপনা কমিটির

স্টাফ রিপোার্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক রোগীর খাবার মেরে খাচ্ছে বলে অভিযোগ উছেঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি। রোগীদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাও পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া পরিবেশন করা হচ্ছে, তা অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধযুক্ত খাবার। এমন অভিযোগই করছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা। মাসের পর মাস এ অবস্থা চললেও এ দুর্নীতির খবরই জানে না কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীদের খাবার বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে কোহিনুর এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিন তিন বেলা ২৫০ রোগীর মধ্যে খাবার বিতরণ করার কথা। প্রতি রোগীর খাদ্য বাবদ সরকারি বরাদ্দ দিনপ্রতি ১ শত ২৫ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ২৪০ গ্রাম চাল, ১৫০ গ্রাম মাছ অথবা মাংস, ১৫ গ্রাম তেল, ১৫ গ্রাম ডাল, পাউরুটি, কলা, ডিমসহ অন্যান্য খাবার। অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানটি ১০০ শয্যার বাইরে কোনো রোগীকে খাবার দেয় না। আবার যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাও পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া যে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে, তা অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধযুক্ত। তাই এ নিয়ে সাধারণ রোগী ও তাদের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও অসুন্তুষ্টি বিরাজ করছে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মনিরুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি তার এক আত্মীয়কে নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। দুইদিন পার হয়ে গেলেও বেড পাননি তার রোগী। তাই প্রতিদিন খাবার নিয়ে কর্মীরা এলেও তার রোগীর বেড না থাকায় তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, খাবার পরিবেশন করা কর্মীরা তাকে জানিয়েছেন, বেডের বাইরে কোনো রোগীকে খাবার দেওয়া হয় না। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বেডের (সিট) বাইরে থাকা প্রায় দেড়শ জনকে প্রতিদিন খাবার দেওয়ার কথা। রফিকুল ইসলাম নামে আরেক রোগী জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে চার দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয়, তা নামমাত্র। তিনি আরও জানান, এক টুকরো মাছ আর খানিকটা ঝোলের সঙ্গে দেওয়া হয় সামান্য সবজি আর অল্প পরিমাণে পাতলা ডাল। তাও আবার সবসময় পান না। ফাতেমা খাতুন নামে আরেক রোগী বলেন, হাসপাতালের দেওয়া খাবার খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো। খাবারও অল্প, তাও আবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রায়ই সরবরাহ করা হয় বাসি সবজি। আর একদিনের মাছের তরকারি দিয়ে তারা দুইতিন দিন চালিয়ে দেয়। এ খাবার খেলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হবে। তিনি প্রতিদিন বাইরে থেকে খাবার এনে খাচ্ছেন বলেও জানান। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, রোগীরা হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার জন্য এলেও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের ফলে তারা সবসময় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। অনেক সময় খাবারে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ভেসে থাকতে দেখে রোগীরা এসে অভিযোগ করেন। আমরা এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললেও তারা তাতে কর্ণপাত করে না। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম মেনেই হাসপাতালে খাবার পরিবেশন করে যাচ্ছি। এতে কোনো প্রকার দুর্নীতি হচ্ছে না। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া গরিব, অসহায় রোগীদের জন্য আলাদা করে খাবার দেওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অনুপ কুমার দেব মনা জানান, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিমান প্রতিমন্ত্রী এড. মাহবুব আলী। তিনি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান। তিনি কখনো দুর্নীতি বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। যদি ঠিকাদার হাসপাতালে এ ধরনের খাবার সাপ্লাই করে থাকে তাহলে অতি শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং খাবারের মান উন্নতসহ যাতে করে প্রত্যেকটি রোগী খাবার পায় সেজন্য আগামী সভায় এ বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট সিরিয়াসলী আলাপ করা হবে। তিনি বলেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রামানিত হয় তাহলে সেই ঠিকাদার যাতে করে আর কাজ না পায় এবং নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২৫০ রোগীকেই প্রতিদিন ৩ বেলা খাবার দিতে হবে। আড়াইশ রোগীর মধ্যে ১০০ রোগীকে খাবার দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খাবারে কোনো প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করাৎ হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর