,

রুম্পার বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার ফাড়িঁর পরিদর্শকের মেয়ে ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিহত শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বিজয়নগরে চলছে শোকের মাতম। মেয়ের কবরের সামনেই বসে অঝোরে কাঁদছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবা মোঃ রুকন উদ্দিন। রুম্পার মৃত্যুকে হত্যাকান্ড দাবী করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান স্বজনরা। মেয়ের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাহিদা আক্তার পারুলও। স্বজনরা তাকে সান্তনা দিয়েও কান্না থামাতে পারছেন না। দুদিন ধরে কিছুই খাননি। শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েন। তিনি বারবার চিৎকার করে বলেন, জরুরী কাজের কথা বলে গেলো, ফিরলো লাশ হয়ে। আমার মেয়েকে কতো কষ্ট দিয়ে ওরা মেরেছে। মরার সময় মেয়েটা কতবার জানি, মা-মা বলে চিৎকার করেছে। তিনি আরও বলেন, ইউনিভার্সটিতে ছাত্রছাত্রীদের শিফট আলাদা হওয়ায় দুদিন ধরে মেয়ের মনও খারাপ ছিল। তার সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল কি, না তা বলতে পারছি না। নাহিদা আক্তার পারুল বলেন, বুধবার সকালে ডিম ভাজি করে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। এটাই যে শেষ খাওয়া কে জানতো? সন্ধ্যায় তার চাচাতো ভাই শুভর নিকট ব্যাগ-মোবাইল দিয়ে চলে যায়। বাসার দ্বিতীয় তলাও রুম্পা উঠেনি। এমন কী জরুরী কাজ ছিল? যার জন্য এতো দ্রুত ছুটে যায়। দিন-রাত অপেক্ষায় ছিলাম- এইতো মেয়ে ফিরবে-ফিরে আসবে। এলো লাশ হয়ে; আমার মেয়েকে কেন মেরে ফেললো, আমি বিচার চাই, বিচার চাই। গত বুধবার রাতে রাজধানীর ইনার সার্কুলার রোড থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার ভোর ৫টায় রুম্পার লাশ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের চরনিলীয়া ইউনিয়নের বিজয়নগরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বেলা ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাদী রুবিলা খাতুনের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকতে খুঁজছে পুলিশ। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সৈকতের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহরে চেষ্টা করছে। রুম্পার সঙ্গে সৈকতের প্রেমের সর্ম্পক ছিল গত কয়েক মাস। কিন্তু সম্প্রতি তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এ নিয়ে টানাপড়েন ছিল। মামলার তদন্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি রুম্পার ভাই আশরাফুল আলমের সন্দেহ, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আর রুম্পার সাবেক প্রেমিককে নিয়ে সন্দেহের কথা বলেছেন তার এক সহপাঠী। এ দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ও সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। রুম্পা থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগ বাসায়। কিন্তু তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান থেকে। কে বা কারা কীভাবে তাকে সিদ্ধেশ্বরীতে নিয়ে গিয়েছিলেন, নাকি রুম্পা নিজেই গিয়েছিলেন, সেসব প্রশ্নের উত্তর না মেলায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, রুম্পা কীভাবে মারা গেছেন তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার লাশ উদ্ধারের পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নের। রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, নিশ্চিতভাবে তার মৃত্যুর কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। তদন্ত চলছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনও পুলিশের হাতে পৌছেনি। রুম্পার বন্ধু-বান্ধবী ও তার কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা একটা অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হবো। অপর এক প্রশ্নের মনিরুল ইসলাম বলেন, রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে কি না- সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। কিন্তু তার স্যান্ডেল, মোবাইল, কানের দুল, আংটি বাসায় ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আমাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এসি এস এম শামীম জানিয়েছেন, রুম্পা কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য বা কেউ তাকে ডেকে এনেছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা রুম্পার মোবাইল ফোনটি পেয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কেন তিনি সেদিন ওই জায়গায় এসেছিলেন তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যে তিনটি ভবনের পাশে তার মরদেহ পাওয়া গেছে, ওই ভবনগুলোর কারও সঙ্গে রুম্পার পরিচয় ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যার সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে অর্ধশত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলার বাদী ওই থানার এসআই আবুল খায়ের জানিয়েছেন, রুম্পার বাসা থেকে ঘটনাস্থল আধা কিলোমিটার দূরে। ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন রয়েছে। যেকোনও একটি ভবন থেকে নিচে পড়ে তিনি মারা যেতে পারেন। ঘটনাটি সন্দেহজনক, তাই অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছেন। তিনি বলেন, রুম্পার মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন ছিল। মেরুদন্ড ছিল ভাঙ্গা, ডান পায়ের গোড়ালিও ভেঙে গেছে। দুই হাতে জখম ছিল, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা গেছে। এসব তথ্য সুরতহাল প্রতিবেদনেও লেখা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর