,

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ (ভিডিও)

সময় ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার একটি মসজিদে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩৮ মুসল্লি গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এশার জামাত শেষ হওয়ার পর তল্লার সবুজবাগের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় মসজিদে সুন্নত নামাজ আদায়রত সবাই দগ্ধ হন বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, বেশিরভাগই গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। তাদের শরীরের ৩০ থেকে ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাদের কাউকেই এখনও শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।

এদিকে স্বজনের দগ্ধ হওয়ার খবর শুনে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে ভিড় জমান অগণিত মানুষ। তাদের কান্না-আহাজারিতে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, মসজিদটির নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন নেওয়া হয়েছে। সেই পাইপে ছিদ্র হয়ে গ্যাস নির্গত হচ্ছিল। পুরো মসজিদ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সব জানালা বন্ধ ছিল। এ কারণে গ্যাস বাইরে বের হতে পারেনি। ওই অবস্থায় কেউ মসজিদের ভেতরে এসি বা ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার সময় সৃষ্ট ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে মসজিদের ভেতরে আগুন ধরে যায় ও মুসল্লিরা দগ্ধ হন। আগুনে মসজিদের ছয়টি এসিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও মণ্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। পরে মসজিদের মেঝেতে পানি ছিটিয়ে গ্যাস নির্গত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে দগ্ধ পাঁচজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর আগেই স্থানীয়রা আহত আরও ৩০-৩৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেনসহ দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা। কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু বলেন, আহতের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে আগুনে তার ভাগ্নে হান্নানসহ অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক আফসারি, মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন, মুসল্লি শামীম, বাহাউদ্দিন, আবদুল আজিজ, মো. আজিজ, নাদিম, গফুর, দুই সহোদর সাব্বির ও জোবায়ের। এ ছাড়া মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সালমা বেগম নামে এক নারীও গুরুতর আহত হন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মোক্তার হোসেন বলেন, রাত পৌনে ৯টার সময় তিনি মসজিদের পাশের একটি দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। হঠাৎ মসজিদের ভেতর থেকে আগুনের স্ম্ফুলিঙ্গ দেখেন। আগুনের তাপে তার মাথার চুলের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এরপরই মসজিদের ভেতর থেকে আহতদের আর্তনাদ শুনতে পান। পরে স্থানীয়রা আহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

ঘটনার পর মসজিদের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের তাপে মসজিদের এসিগুলো গলে গেছে। ভেতরে থাকা সিলিং ফ্যানের পাখাগুলো বেঁকে গেছে। থাই গ্লাসের দরজা ভেঙে মেঝেতে কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের দেড়শ’ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আগুনে দগ্ধদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে আহাজারি : করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার মধ্যেই শুক্রবার রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে ভিড় করছিলেন দগ্ধদের স্বজনরা। তাদের কেউ চিৎকার করে কাঁদছিলেন। কেউ আবার নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলেন। অনেকেই হাসপাতালের ভেতরে দগ্ধ স্বজনের কাছে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলেন। তবে দগ্ধদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না।

কান্নারত রওশন আরা সমকালকে জানান, মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গিয়ে তার দুই জামাতা ইমাম হোসেন ও আমজাদ হোসেন দগ্ধ হয়েছেন। তারা পেশায় গার্মেন্টকর্মী। নারায়ণগঞ্জের খানপুর সরদারপাড়া এলাকায় তাদের বাসা।

রুবেল হোসেন জানান, তার ভাই ভ্যানচালক মিজানুর রহমানকে দগ্ধ অবস্থায় এই হাসপাতালে আনা হয়েছে শুনে তিনি ছুটে আসেন। তবে ভাইয়ের কী অবস্থা তা তিনি জানতে পারেননি।

 


     এই বিভাগের আরো খবর