,

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা’র প্রেস ব্রিফিং, স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত দৃশ্য ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল! যুবক খুন ॥ দম্পতি গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ প্রথমে বাসার মালিক আমেরিকা প্রবাসি ও তার স্ত্রীর যৌন মিলনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি। পরে সেই ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে প্রবাসির স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেন নিজাম উদ্দিন (২৩)। যিনি পেশায় ফুসকা হাউজের কর্মচারি। প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়েরও স্বপ্ন দেখছিলেন নিজাম। কিন্তু এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি তার। প্রবাসী ও তার লোকজন খুন করেন ফুসকা হাউজের কর্মচারী নিজাম উদ্দিনকে। গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। তিনি জানান, এ ঘটনায় ১৭ মার্চ দেশত্যাগের সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে শুক্রবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে স্বামী-স্ত্রী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে এবং হত্যার দায় স্বীকার করে। আটককৃতরা হলেন, হবিগঞ্জ শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা মৃত কুদরত উল্লাহর ছেলে মো. হানিফ উল্লাহ (৩৫) ও তার স্ত্রী রোমানা আক্তার (৩০)। নিহত নিজাম উদ্দিন মাধবপুর উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ রোডের ঢাকা ফুসকা হাউজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। নিজাম উদ্দিন ও তার দুই সহকর্মী হানিফ উল্লাহর একটি টিনশেটের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন। পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তার হওয়া স্বামী-স্ত্রী আদালতকে জানান, প্রায় ৪ বছর আগে স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ আমেরিকা চলে যান হানিফ উল্লাহ। ২০২০ সালের নভেম্বরে হানিফ উল্লাহ তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে দেশে আসেন। দীর্ঘদিন তাদের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকার সুবাদে নিজাম উদ্দিনের সাথে তাদের সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে নিজাম উদ্দিন আমেরিকা প্রবাসী হানিফ উল্লাহর শোবার ঘরে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে রেখে প্রবাসীর স্ত্রী রোমানার গোসলের ভিডিও ও স্বামীর স্ত্রীর একান্ত মূহূর্তের ভিডিও ধারণ করে রাখেন। পরে সেই ভিডিও ও ছবি রোমানাকে দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। এ সময় ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকাও হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে নিজাম উদ্দিন প্রবাসীর স্ত্রী রোমানা আক্তারকে তার স্বামীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে মানষিকভাবে ভেঙে পড়েন রোমানা। এক পর্যায়ে বিষয়টি সে তার স্বামীকে জানালে হানিফ উল্লাহ নিজাম উদ্দিনকে খুনের পরিকল্পনা করে। গত ১১ মার্চ সন্ধায় নিজাম উদ্দিনকে রোমানার মাধ্যমে ফোন করে ডেকে আনা হয় শহরের শ্যামলি এলাকার একটি গ্যারেজে। সেখানে হানিফ উল্লাসহ অন্য আসামিরা তাকে হত্যা করে লাশ একটি ঝোপে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ওইদিনই স্বামী-স্ত্রী হবিগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ মার্চ নিহত নিজাম উদ্দিনের বাবা ইমাম উদ্দিন বাদি হয়ে আমেরিকা প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৭ মার্চ দেশত্যাগের সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঘাতক স্বামী স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


     এই বিভাগের আরো খবর