,

হবিগঞ্জ পৌরসভার ১শ ১৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেন মেয়র আতাউর রহমান সেলিম

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নতুন কোন করআরোপ ছাড়াই ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১শ ১৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। মঙ্গলবার হবিগঞ্জ পৌরভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বাজেট ঘোষণা করেন। নতুন বাজেটে মোট আয় দেখানো হয়েছে ১শ ১৭ কোটি ৩৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৭১ টাকা। মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ১শ ১৬ কোটি ৮০ লক্ষ ২৮ হাজার ৭শ ৬২ টাকা। উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে ৫৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯ টাকা।

এবারের বাজেটে ইউজিআই আইপি-৩ এর আওতায় উল্লেখযোগ্য যে ব্যয়গুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো হলো, ডাম্পিং স্পটের জমি অধিগ্রহন, কিবরিয়া অডিটরিয়াম সংস্কার, ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট চালু, পৌর শপিং মল নির্মাণ (পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে), চৌধুরী বাজার কাচামাল হাটা ও সিনেমা হল বাজার ও গরুর বাজার উন্নয়ন, পৌর কিচেন মার্কেট উর্ধমূখী সম্প্রসারণ, পুরাতন পৌরসভার জমিতে মাল্টিপারপাস বিল্ডিং নির্মাণ, এম্বুলেন্স ক্রয়, পৌর শিশুপার্ক নির্মাণ ও ট্রাক ট্রার্মিনাল নির্মাণ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘ আমি যখন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহন করি তখন পৌরসভার তহবিলে স্থিতি ছিল মাত্র ৪০ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭শ ১২ টাকা। আর পৌরসভার দেনা ছিল ৪ কোটি ১৯ লক্ষ ৮০ হাজার ৪শ ৯২ টাকা। ৪০ লক্ষ টাকার বিপরীতে ৪ কোটি টাকার দেনা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহন করা কত চ্যালেঞ্জিং সেটি নিশ্চয়ই আপনারা অনুমান করতে পারছেন। তার উপর দায়িত্ব গ্রহনের ৮ দিন পর ৫ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে সরকারীভাবে ঘোষণা হলো সর্বাত্মক লকডাউন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহন করার পূর্বে পৌরসভার কি অবস্থা ছিল তার সামান্য উল্লেখ না করলেই নয়। যেখানে পৌরসভার অন্যতম বড় আয়ের উৎস গরুর বাজার ইজারা হতো প্রায় ৯১ লক্ষ টাকা, সেখানে আমি দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে নানা অজুহাতে ওই বাজার প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা কমে ইজারা দেয়া হয় যা সত্যিই দুঃখজনক। এছাড়াও লোকদেখানোর জন্য পৌরসভার নিজস্ব তহবিল প্রায় শূন্য রেখেই আড়াই কোটি টাকার ৫৩ টি উন্নয়ন প্রকল্প কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয় যা পৌরসভার জন্য এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে। হবিগঞ্জ পৌরসভার মাটিয়া দই বিল ১৪২৪ বাংলা সনে ইজারা হয়েছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকায়। এখন সেই টাকার পরিমান আরো বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব পাওয়ার পূর্বেই পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে সেই বিল ১৪২৭ বাংলা সনে মাত্র ১২ লক্ষ টাকায় ইজারা দেয়া হয়। হবিগঞ্জ শহরের পোষ্ট অফিস রোডে রয়েছে পৌরমার্কেট। যে পৌরমার্কেট হবিগঞ্জ পৌরসভার জন্য একটি অন্যতম আয়ের উৎস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী পৌর কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারনে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরসভা। আমার দায়িত্ব গ্রহনের আগে উন্নয়নের ঢাকঢোল পেটালেও মূলতঃ উন্নয়ন কাজ ছিল প্রায় বন্ধ।’ মেয়র বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সমালোচনার চেয়ে বড়- সমস্যার সমাধান করা। আর তাই আমি দায়িত্ব গ্রহন করার পর পরই শহরের বাইপাসের পার্শ্বে অবস্থিত ৭ কোটি টাকার মাষ্টার ড্রেন, যার নির্মাণ বন্ধ ছিল তা’ চালু করেছি। এই মাষ্টার ড্রেন দিয়ে শহরের ৫ টি ওয়ার্ডের পানি নিস্কাশিত হয়। এ ড্রেন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে হবিগঞ্জ পৌরসভা। শুধু তাই নয় আমি দায়িত্ব গ্রহন করার পর সর্বাত্মক লক ডাউনের মাঝেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকল উন্নয়নকাজ চালু রেখেছি। সাথে সাথে যথাসম্ভব মশক নিধন, সড়ক বাতি, ইপিআই কার্যক্রমসহ যাবতীয় নাগরিক সেবাকার্য গতিশীল করার চেষ্টা করেছি।’
নতুন বাজেটে নিজস্ব খাতে মোট আয় দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৭শ ৭২ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৮৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৮শ ৩৮ টাকা। উন্নয়ন খাতে মোট আয় দেখানো হয়েছে ১শ ৬ কোটি ২৫ লক্ষ ৭০ হাজার ৯শ ৯৯ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয়েছে ১শ ৫ কোটি ৯৩ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯ শ ২৪ টাকা।
রাজস্ব আয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গৃহ ও ভূমির উপর কর চলতি ও বকেয়া ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭শ ৭০ টাকা, লাইটিং চলতি ও বকেয়া ৫৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৫শ ১৬ টাকা, কনজারভেন্সী চলতি ও বকেয়া১ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮শ ৭০ টাকা।রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য ব্যয় ধরা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও মেয়র-কাউন্সিলরদের সম্মানীভাতা ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩শ ৩৪ টাকা, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার ৫০ লক্ষ টাকা। উন্নয়ন খাতে উল্লেখযোগ্য আয় সরকার প্রদত্ত উন্নয়ন সহায়তা মঞ্জুরী ১ কোটি ও বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা মঞ্জুরী ২ কোটি। উল্লেখযোগ্য ব্যয় রাস্তা নির্মাণ ৮০ লক্ষ, ব্রীজ কার্লভার্ট নির্মাণ ৪০ লক্ষ, ড্রেন নির্মাণ ৫০ লক্ষ ইত্যাদি। ইউজিআইআইপি-৩ এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য আয় পূর্তকাজ রাস্তা, ড্রেন ইত্যাদি ২০ কোটি এবং উল্লেখযোগ্য ব্যয়ও পূর্তকাজ রাস্তা, ড্রেন ইত্যাদি ২০ কোটি। রুরাল এক্সেস রোড ইমপ্রোভম্যান্ট প্রজেক্ট ইন সিলেট ডিভিশন (এলজিইডি) এর আওতায় আয় ও ব্যয় দেখানো হয়েছে পূর্তকাজ রাস্ত-ড্রেন বাস্তবায়ন ২৫ কোটি টাকা, পুরাতন খোয়াই নদীর পাড়ের রাস্তা, ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্য্য বর্ধন ২৫ কোটি টাকা এবং চন্দ্রনাথ পুকুর পাড়ে মার্কেট নির্মাণ।
সংবাদ সম্মেলনে পৌরকাউন্সিরদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ জাহির উদ্দিন, গৌতম কুমার রায়, মোঃ আবুল হাসিম, মোহাম্মদ জুনায়েদ মিয়া, টিপু আহমেদ, শাহ সালাউদ্দিন আহাম্মদ টিটু, আলাউদ্দিন কুদ্দুছ, সফিকুর রহমান সিতু, প্রিয়াংকা সরকার, খালেদা জুয়েল ও শেখ সুমা জামান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ পৌরসভার বাজেট সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় মেয়রের কাছে জানতে চান। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। তিনি বলেন সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে পৌরসভার সকল সমস্যা একে একে সমাধান করে হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তরিত করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর