,

হবিগঞ্জ শহরে গৃহস্থালি বর্জ্যের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে চিকিৎসা বর্জ্য :: বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার : হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় গৃহস্থালি বর্জ্যের চেয়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চিকিৎসা বর্জ্য বেশি ক্ষতি করছে। এসব বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় দিন দিন দূষণ বেড়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হবিগঞ্জ পৌরসভার সভাকক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ নুরুল হক, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইকরামুল ওয়াদুদ।
সভার সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ সাহেদা আখতার বলেন, হবিগঞ্জ পৌরসভা ১৯৮১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে মর্যাদা পায়। এই পৌরসভায় ৯০ লাখ ৩২৫ জন মানুষের বসবাস। এ পৌরসভায় প্রতিদিন মনুষ্য বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য ও চিকিৎসা বর্জ্য মিলে প্রায় ৩৫ মেট্রিক টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এসব বর্জ্য ফেলার জন্য পৌরসভার নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। বর্তমানে শহরের সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়ামের পাশের খালে। শহরের প্রাণকেন্দ্র খোয়াই নদের চৌধুরী বাজার সেতুর পাশেও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিনের বর্জ্যে হবিগঞ্জের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
সভায় বক্তারা বলেন, বর্জ্য তিন ধরনের হলেও হবিগঞ্জ পৌরসভায় বর্জ্য দুই ধরনের। এর মধ্যে একটি নিত্যদিনের গৃহস্থালির বর্জ্য। অন্যটি হবিগঞ্জ পৌরসভায় গড়ে ওঠা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চিকিৎসা বর্জ্য। হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় ৩৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চালু আছে। এসব চিকিৎসা বর্জ্য নিত্যদিনের গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করছে। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মনিটরিং দৃশ্যমান নয়। বিষাক্ত বর্জ্যে শহরের খোয়াই নদ এখন ঝুঁকিতে আছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায় শুধু পৌরসভার নয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকেও এর দায় নিতে হবে। বক্তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৌরসভার নীতিমালা প্রণয়নের প্রতি জোর দাবি জানান।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য অব্যবস্থাপনার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা এক দিনে গড়ে ওঠেনি। ২৫ থেকে ৩০ বছরে এ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ আসে। কিন্তু স্থান নির্ধারণ করতে না পারার কারণে সেই অর্থ ফেরত গেছে। এটা হবিগঞ্জবাসীর জন্য দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র ১৮ মাস আগে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পৌরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে দুটি স্থান নির্ধারণ করেছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়মনীতি না মেনে শহরের যেসব বর্জ্য ফেলার স্থান গড়ে উঠেছে, সেগুলো অপসারণ করা হবে। হবিগঞ্জ শহরকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে।’
এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক মনসুর উদ্দিন আহমেদ, শোয়েব চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, জেলা বণিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান শামীম, জেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল বারী আওয়াল, কবি ও লেখক তাহমিনা বেগম গিনি প্রমুখ।


     এই বিভাগের আরো খবর