,

নবীগঞ্জে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানে নানা অনিয়মের অভিযোগ :: মালিকপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

সরকারী পাওনা ৮০ লক্ষ টাকা

ব্যাংক ঋণ ৮ কোটি’র বেশি

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন

কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে স্টাফ এবং শ্রমিকদের

জাবেদ তালুকদার : নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানে লম্বা সময় ধরে ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজার না থাকা, মেন্টেনেইন্স এর অভাবে কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া, সি.সি মামলার সরকারি পাওনা, স্টাফদের মোটা অংকের বেতন বকেয়া থাকা, চা শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বাবদ মোটা অংকের টাকা বকেয়া রাখা, প্রায় ৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যাংক ঋণ, মোটা অংকের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রাখাসহ নানা অনিয়ম ও চা বাগান ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুযায়ী সঠিকভাবে বাগান পরিচালনা না করায় মালিকপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কারনে প্রায়ই চা-শ্রমিকদের মধ্যে অষন্তোষ দেখা দেয়। মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, কাজ বর্জনসহ নানান কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও তারা বকেয়া বেতন পাওয়াসহ বিভিন্ন দাবীতে আন্দোলনে নামেন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহারীয়ার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বাগানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের শান্ত করেন।
ইমাম চা বাগানের সভাপতি রাম ভজন রবি দাস জানান, ৪ সপ্তাহ ধরে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের প্রায় ৬ শত শ্রমিক তাদের মজুরি পাননি এবং বকেয়া এরিয়া বোনাসের প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাগানের মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলেও সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। মজুরি না পেলে আবারও মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা।
অন্যান্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন ৪ সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছেনা এবং পূর্বের পাওনা বকেয়া টাকা দিতেও মালিক পক্ষ টালবাহানা করছে। বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা না খেয়ে দিনাতিপাত করতেন। ধুকে ধুকে মরতে হচ্ছে।
ইমাম চা বাগানের দায়িত্বে থাকা টিলা বাবু শিব শংকর বলেন, আড়াই বছর যাবত ম্যানেজার নেই। সবকিছু হেড অফিস নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের কিছু করার নেই। প্রায় ৪ মাস যাবত নিজেও বেতন পাচ্ছি না। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রধান কার্যালয় থেকে ৩ সপ্তাহ ধরে কোনো টাকা দেওয়া হচ্ছে না। টাকা না পেলে আমরা কোথা থেকে দেবো। তাই টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলন করছে এবং গত সোমবার থেকে তারা কাজ করছে না।
বাওয়ানী চা বাগানের দায়িত্বে থাকা টিলা ক্লার্ক শ্যাম নারায়ণ ভর এর মোবাইল নাম্বারে বার বার ফোন দিলে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ইমাম ও বাউয়ানি পৃথক দুটি চা বাগান হলেও উভয় বাগানের একই মালিক। ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে বাগান ম্যানেজারের পদটি শূণ্য রয়েছে এবং সহকারী ম্যানেজারের পদটিও প্রায় ৭/৮ বছর যাবৎ শুন্য রয়েছে। উপযুক্ত মেন্টেনেইন্স এর অভাবে কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গেল বছরের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত বাগান স্টাফদের প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাছাড়া ২০১৯-২০ইং সনে স্টাফদের বেতন বাবদ প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা, ২০২২ইং সনে স্টাফদের প্রায় ৬ লক্ষ টাকা বোনাস এবং প্রভিডেন্ড ফান্ড এর প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে।
গত ৩ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে, ৩ সপ্তাহে শ্রমিকদের মজুরী ও রেশন বাবদ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে- বাগান কর্তৃপক্ষের প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে এবং মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় কয়েদিন পূর্বে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা বকেয়া থাকায় এর বিপরীতে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
চা বাগান কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম ও সঠিকভাবে বাগান পরিচালনা না করায় মালিকপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সচেতন মহল মনে করছেন- দীর্ঘদিন সময় ধরে ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজার না থাকা, সরকারি পাওনা, স্টাফদের বেতন বকেয়া থাকা, চা শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বকেয়া রাখা, প্রায় ৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যাংক ঋণ, মোটা অংকের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রাখাসহ সর্বক্ষেত্রে বাগান পরিচালনায় বাগান মালিকদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তারা মনে করেন- এভাবে চলতে থাকলে চা শিল্পের বড় ধরণের ক্ষতি এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে। বাগানের এসব অনিয়ম দূর করতে এই মালিকপক্ষের সাথে লিজ বাতিল করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহারীয়ার বলেন- আমাদের পক্ষ থেকে বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও রেশন ভাতা ঠিকমতো দিচ্ছে না। বর্তমান মালিকের নামে লীজকৃত বাগান বাতিলের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করবো।


     এই বিভাগের আরো খবর