,

হবিগঞ্জে মাদার কেয়ার হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশনের অভিযোগ :: রোগীর পেটের ভেতর ফরেইন বডি :: ৪ বার অপারেশন করিয়েও হয়নি সমাধান

জাবেদ তালুকদার : হবিগঞ্জে মাদার কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারে অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশন করার অভিযোগ উঠেছে। অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে এক রোগীর সিজারের ফলে যন্ত্রপাতি থেকে পেটের ভেতর জীবানু প্রবেশ করে ফরেইন বডি সৃষ্টি হয়েছে যা একটা টিউমারের মত বড় চাকা হয়ে পেটের ভেতর পচন ধরে। অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশনের ফলে সৃষ্ট ফরেইন বডির কারণে ৪ বার অপারেশন করিয়েও সুস্থ্য হতে পারেননি তিনি। নরক যন্ত্রনা সহ্য করেও দীর্ঘ ১ বছর ধরে চিকিৎসার কাজে ঢাকা-সিলেট-ভারতে আসা যাওয়া চলছে তার। তবে অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশনের বিষয়টি অস্বীকার করেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সিরাজুল ইসলাম আপন।
জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার বড়াইল উত্তর বাজার এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস গত বছরের ৮ মার্চ হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগরস্থ মাদার কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারে সিজারের মাধ্যমে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সেই সিজারিয়ান সেকশনের সার্জন ছিলেন ডাঃ এস কে ঘোষ। যথারীতি ১১ই মার্চ ২০২২ইং হাসপাতাল থেকে তাদেরতে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয়। ডেইট অনুযায়ী হাসপাতালে গিয়ে সেলাইও কাটিয়ে আসেন তিনি। সিজারের ৪২ দিন পর হঠাৎ তীব্র ব্যাথা এবং সেলাইয়ের জায়গা ছিদ্র হয়ে পুঁজ, রক্ত ও পানি পরা শুরু হয়। তাৎক্ষনিক তিনি ডাঃ এসকে ঘোষকে কল করে বিষয়টি জানালে এসকে ঘোষ তাকে চেম্বারে যেতে বলেন। চেম্বারে দেখা করার পর তিনি সাধারণ ড্রেসিং করিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন এবং বলেন বাসায় নিজে নিজে ড্রেসিং করে নিতে, ঠিক হয়ে যাবে এবং সাথে কিছু এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিলেন। ভয়ে তিনি নিজে ড্রেসিং না করিয়ে, হাসপাতাল থেকে ড্রেসিং করান। দিন দিন অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ভূক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌস ডাঃ এসকে ঘোষের চেম্বারে দৌড়াচ্ছিলেন এবং ড্রেসিং করাচ্ছিলেন। পরে এসকে ঘোষের অধীনে ১ম বার সেকেন্ডারী সেলাই দেওয়া হলো। সেলাই থাকাকালীনই আবার ছিদ্র হয়ে পুঁজ পানি পরা শুরু হয়। ১৪ দিন পর সেলাই কাটা হলো। তিনি বার বার ডাঃ এস কে ঘোষকে কল করছিলেন আর তার চেম্বারে চেম্বারে দৌড়াচ্ছিলেন। এন্টিবায়োটিক ঔষধ আর এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন কোনো কিছুতেই কাজ না হওয়ায় আবার ড্রেসিং করে ২য় বার টার্শিয়ারী সেলাই দেওয়া হলো। টার্শিয়ারী সেলাই কাটার পর আবার পুঁজ হয়ে রক্ত পানি পরে। তারপরে সিলেট আল হারামাইন হসপিটালে সেলাই খুলে দেখা যায় ভেতরে ফরেইন বডি তৈরী হয়েছে, যেটি টিউমারের মত বড় চাকা হয়ে পেটের ভেতর পছন ধরেছে। অপারেশনের যন্ত্রপাতি পরিচ্ছন্ন না থাকায় এমনটা হয়েছে বলেই জানান চিকিৎসকরা। পরে সেলাই কাটানোর পর সেলাইয়ের একসাইড ফোলা আর লাল ছিল, আস্তে আস্তে এই অংশ দিয়ে পুঁজ পানি রক্ত পরে। সুস্থ হওয়ার আশায় তিনি একের পর এক ডাক্তার চেইঞ্জ করতে শুরু করেন, কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। অন্য পাশে সেলাইয়ের অংশ সাদা হয়ে প্রায় গর্ত হয়ে যাচ্ছে এবং এটা দিয়ে পানি চুষায়। অন্য একটা গর্ত হয়ে অতিরিক্ত পুঁজ পানি পড়া শুরু হয়। সিলেটে অনেক চিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়ে নিরাশ হয়ে অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ণ এ প্লাস্টিক সার্জারি হসপিটাল, বিআরবি হসপিটাল, হেলথ এন্ড হোপ হসপিটালে বিভিন্ন ডাক্তারদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তারা কেউই সুস্থতার আশ্বাস দিতে পারেন নি। পরে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন এর জন্য ৩ মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন, এই চিকিৎসা আগামী ১ বছর চলমান থাকবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েঝেন বলে জানান ভূক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌস, এরপর ডাক্তাররা সুস্থতার কথা বলতে পারবেন।
ভূক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বার বার মনে হয় এই নরক যন্ত্রণা থেকে সুইসাইড করে ফেলা ভাল। কিন্তু আমার বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আমি বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতেছি। শারিরীক মানসিক আর্থিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ আমার সাথে কি হচ্ছে, আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে, কতটা শারিরীক মানসিক কস্টের মধ্যে দিয়ে আমি যাচ্ছি সেটা বুঝার ক্ষমতা কারো নেই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সিরাজুল ইসলাম আপন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অপরিচ্চন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশনের প্রশ্নই আসে না, উনার যে সমস্যা হয়েছে এটা অন্য কারনেও হতে পারে। সরাসরি কথা বললে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা যাবে।


     এই বিভাগের আরো খবর