,

জলবায়ু সংকটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে হাওরে :: জলবায়ু ন্যায্যতা ও কৃষি, মৎস্য সম্পদ এবং জীববৈচিত্র রক্ষার দাবিতে হাওরে অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার : হাওরে কলকারখানা স্থাপন এর কারণে জমির পরিমাণ কমছে, দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি, বাতাস। এছাড়া হাওরের বুকচিরে যত্রতত্র সড়ক নির্মাণ করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে। কমছে হাওরের আয়তনসহ ফসল উৎপাদন। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছসহ জলজ প্রাণী। জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। নদী-খাল-বিলে নিক্ষেপ করা অপরিশোধিত বর্জ্য মানুষ এর জীবন-জীবিকা’র উপর মারাত্মক আঘাত আনছে। অনেকে পেশা হারাচ্ছেন। চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন হাওর কেন্দ্রিক জীবন -জীবিকা নির্বাহকারী মানুষজন। জলবায়ু ন্যায্যতা ও কৃষি, মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র রক্ষার দাবিতে হাওরে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা একথা বলেন।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় লাখাই উপজেলার বুল্লার হাওর সংলগ্ন সুতাং নদী তীরে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা, লাখাই প্রেসক্লাব ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে হাওরাঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্থ জেলে, কৃষক, মাঝিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি ও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, গবেষক অধ্যাপক জাহান আরা খাতুন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক এডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ, লাখাই প্রেসক্লাব সভাপতি এডভোকেট আলী নেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কলেজ শিক্ষক নাসরিন হক, এডভোকেট বিজন বিহারী দাস, ডা: আলী আহসান চৌধুরী, প্রতীক থিয়েটার সভাপতি ডাঃ সুনীল বিশ্বাস, বুল্লা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, জুনাইদ চৌধুরী, লাখাই প্রেসক্লাব এর সহ-সভাপতি আশীষ দাস গুপ্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদ, মোঃ আতাউর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম, আহসানুল হক সুজা, আফরোজা সিদ্দিকা, সাংবাদিক আব্দুল হালিম, মোঃ সাইদুর রহমান, মোঃ বেলু মিয়া, মোঃ মহিউদ্দিন রিপন, সাইদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, মোঃ আবিদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, কৃষক কাছম আলী, আব্দুল কুদ্দুছ, মশিউর রহমান, জেলে মোঃ আহমেদ প্রমুখ।
মূল বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের নির্বাহী সদস্য ও লাখাই প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহার উদ্দিন। মাঝি মোঃ আহমেদ বলেন, হাওরের এই অঞ্চলে বর্ষাকালে বিভিন্ন স্থানে নৌকা দিয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করতাম আমরা। গত কয়েক বছর ধরে সুতাং নদীসহ হাওরের পানিতে খুব দুর্গন্ধ হয়। দূষণের জন্য নৌকা চালাতে কষ্ট হয়। কৃষক কাছম আলী বলেন, বংশ-পরম্পরায় কৃষি কাজ আমাদের পেশা। দূষণ আমাদের মাটি খেয়ে ফেলেছে। ফসল লাগাই, কিন্তু ফলন হয় না।
কৃষক মশিউর রহমান বলেন, নদীতে পচা পানি, সেচ দিতে পারিনা, শ্রমিক পাওয়া যায় না, এই পানিতে শ্রমিক নামে না। গরু বাচুরকেও পানি খাওয়াতে পারিনা। কাইয়ুম বলেন, মানবসৃষ্ট কর্মকান্ডের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়েছি আমরা। এডভোকেট বিজন বিহারী দাস বলেন, মানুষ আজ নিরূপায়। প্রাণী, উদ্ভিদ মারা যাচ্ছে। দূষণ এতই তীব্র যে শামুকের মতো শক্ত প্রাণী পর্যন্ত মারা যাচ্ছে। একসময় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন মাছ সংগ্রহ করার জন্য ছুটে আসতো। হাজার হাজার জেলে পরিবার এর জীবন জীবিকা চলত হাওর ও সুতাং নদী থেকে মাছ ধরে। এখন আর সেই মাছ নেই! পেশা বদল করতে হচ্ছে আমাদের। বললেন জেলে আব্দুল কুদ্দুছ। সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে কয়েক বছর ধরে হাওরে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। সময় মত বুরো ধানের বীজতলা তৈরি ও যথাসময়ে ধান চাষাবাদ ও রোপন করা যায় না। ফলে হাওরের কৃষি কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষককূল। মূল বক্তব্যে খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সরকারি হিসেবে দেশে ৪২৩টি হাওর রয়েছে। দেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন হয় হাওরাঞ্চল থেকে। হাওর এবং হাওরে প্রবাহিত অসংখ্য নদী যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ন হাওরাঞ্চল এর প্রতি চলে অনাচার। হাওর, নদনদী, খাল-বিল, জলাশয় যেন কলকারখানার বর্জ্য ফেলার ঠিকানা!
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন আর হাওর নদী দূষণের কারণে ফসলি জমির উর্বরতা কমছে। একারণে স্যার কীটনাশক সেচ দিতে গিয়ে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে ধানসহ ফসলের। বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
তোফাজ্জল সোহেল আরো বলেন,, শিল্পায়নের জন্য শ্রেণি পরিবর্তন করে হত্যা করা হচ্ছে হাওর ও এর জীববৈচিত্রকে। যত্রতত্র সড়ক নির্মাণ করে হাওর বিনাশী উন্নয়ন মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যার জন্য হাওরের প্রকৃতচিত্র উধাও হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু সংকটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে হাওরে। শিল্পায়নের জন্য শ্রেণি পরিবর্তন করে হত্যা করা হচ্ছে হাওর ও এর জীববৈচিত্রকে।
বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার করে হাওরকে দূষণসহ সকল ধরনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে হবে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জীবনের জন্য।


     এই বিভাগের আরো খবর