,

সমঝোতায় আসন পেলেও স্বস্তিতে নেই জাপা :: আলোচনার শীর্ষে কেয়া চৌধুরী

হবিগঞ্জ-১ আসনে জমে উঠেছে প্রচার প্রচারণা

জাবেদ তালুকদার : প্রবাসী অধ্যুষিত ও পাহাড়, সমতল, হাওড়-বাওড় এবং চা বাগান বেষ্ঠিত হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকেই নানা বিষয়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে এ আসনটি। নানা আলোচনা-সমালোচনা আর নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত এ আসনে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্র্থীরা।
এ আসনে জোটের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। পরে শরিকদের এ আসন ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। তবে সমঝোতায় আসনটি পেলেও নানা কারণে স্বস্তিতে নেই জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ আসনটি ছাড়লেও ভোটের মাঠে রয়েছেন আরেক হেভিয়েট প্রার্থী কেয়া চৌধুরী। এছাড়া নানা কারণে জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা নড়বড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিতেও রয়েছে ব্যাপক দলীয় কোন্দল। কয়েক গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে গতকাল আনুষ্ঠাকিভাবে জাতীয় পার্টির রওশন পন্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার ঘোষনা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে বেশ বেকায়দায়ই রয়েছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক এই সংসদ সদস্য।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক গোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। নবীগঞ্জ ও বাহুবলে তার বড় একটি সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছে রয়েছে তার তুমুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। সাধারণ ভোটারদের মুখে মুখে তার নাম। নানা মহলে তাকে নিয়েই চলছে তুমুল আলোচনা। তিনিও প্রাণান্তর চেষ্টা করছেন ভোটারদের মন জয় করতে।
ভোটাররা বলছেন, এ দুই প্রার্থীকে ঘিরেই এ আসনে বইছে নির্বাচনী আমেজ। হাট বাজার ও চায়ের স্টলে ভোটাররা করছেন চুলছেড়া বিশ্লেষন। দিন যত যাচ্ছে প্রার্থীরা নিজেদের ভোটের সংখ্যা ভারী করে তুলছেন। ইতিমধ্যে নবীগঞ্জ ও বাহুবল দুটি উপজেলাতেই প্রধান সড়ক, হাট বাজার এবং চায়ের দোকান ছেয়ে গেছে পোস্টার ও ব্যানারে। পাশাপাশি প্রতিদিন প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নিজের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগীতা।
কেয়া চৌধুরীর সমর্থকরা জানান, তাদের প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের এমপি হয়েও এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে এ আসনের চিত্র বদলে দিতে পারবেন তিনি। এসব কারণে দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দিবেন সচেতন ভোটাররা। তারা জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশমতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাই দলীয় লোকজনও তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কেয়ার নির্বাচনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলে তাদের বিশ্বাস।
লাঙ্গলের প্রার্থীর সমর্থকরা জানান, এর আগে তাদের প্রার্থী সংসদ সদস্য থাকাকালীন এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। এ ছাড়া জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার জন্য একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগে স্থানীয়ভাবে মতবিরোধ থাকলেও এ নির্বাচনে তারা এক হয়ে লাঙ্গলের বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। তাই বিপুল ভোটে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে তারা আশাবাদী।
এ আসনে এ দুইজনের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ (ট্রাক), ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের মোস্তাক আহমেদ ফারহানী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো: নুরুল হক (গামছা) প্রতিক।
১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়নের এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৩১ হাজার ১শ’ ৮৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৭ হাজার ৯শ’ ৪২, নারী ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ২শ’ ৪১ জন ও হিজড়া ২ জন। নবীগঞ্জে ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় মোট ১১৬টি কেন্দ্র এবং বাহুবল উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ৬১ টি কেন্দ্র রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর