,

হবিগঞ্জ-২ আসনে নবীন-প্রবীণের লড়াই সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা

জাবেদ তালুকদার : হবিগঞ্জ-২ আসনে দিনরাত চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। হাওর বেষ্টিত এ আসনটিতে স্বাধীনতার পর অধিকাংশ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসছেন। যার জন্য আসনটি নৌকার ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে এবারের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন তিনবার নৌকা নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য। হবিগঞ্জ-২ আসনে এবার মূল লড়াইটা হবে তরুণ আর প্রবীণের মধ্যে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে নির্বাচন করছেন এ আসনের প্রয়াত সর্বজনগ্রাহ্য সংসদ সদস্য এডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমদের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। অন্যদিকে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনবারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। নৌকার ভোটে অনেকটা ভাগ বসাতে চলেছেন নৌকার সাবেক মাঝি মজিদ খান। ফলে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে আওয়ামী লীগ। কৌশলেও এসেছে নতুনত্ব। এবার প্রতিটি আসনে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। তারা নির্বাচন করবেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তাদের উৎসাহ ও সহযোগিতা করতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দেশজুড়ে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হওয়ার ধুম পড়ে যায়। এবারের নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনে কার্যত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগেরই বিকল্প প্রার্থীর। এ অবস্থায় হবিগঞ্জ-২ আসনে এবার মূল লড়াইটা হবে অভিজ্ঞ আর নবীনের মধ্যে। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে নির্বাচনে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। অন্যদিকে ওই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি আলহাজ অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান দলীয় টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ খান এমপি প্রতিদিনই বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রামে হাটবাজারে নিজেদের লোক নিয়ে দিনরাত চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমানে তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় নৌকার প্রার্থী রুয়েল। করোনার সময়ে তার নিজস্ব অর্থায়নে দুই উপজেলাবাসীর মধ্যে সাধ্যমতো সাহায্য-সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি তার নিজের পক্ষ থেকে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক কর্মকাণ্ড করেছেন তিনি। বিভিন্ন সভা/সেমিনারের মাধ্যমে হাট-বাজারেও সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন অবিরত। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুই উপজেলার মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদের পুত্র ও ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রুয়েল।
অন্যদিকে, হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে তিনবারের সংসদ সদস্য আলহাজ অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান গত ১৫ বছরে দুই উপজেলায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় এমপি আবদুল মজিদ খান বানিয়াচং ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলাকে বদলে দিয়েছেন। দুই উপজেলাকে পরিণত করেছেন উন্নয়নের মডেল হিসেবে। টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হত মজিদ খান। নির্বাচিত হয়েই বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। অবহেলিত এই ভাটির জনপদের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট যোগাযোগ, শিক্ষা স্বাস্থ্য, বিদ্যুতায়নসহ জনগণের মৌলিক অধিকারের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এলাকাকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেন। ফলে এক সময়ের অবহেলিত এলাকা আজ উন্নয়নের রোড মডেল। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুতায়নসহ সর্বক্ষেত্রে এনেছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বানিয়াচং সদরসহ দুটি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে বহু ছোট-বড় সড়ক নির্মাণ করেছেন তিনি। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন গতি এসেছে, তেমনি আর্থ সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন এসেছে এসব নির্মাণের কারণে। বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। স্কুল-কলেজ সরকারি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের হবিগঞ্জ-সিলেট শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমেছে।
একটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হাওরবেষ্টিত হবিগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসন। এই আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩শ’ ৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ১শ’ ৪৭ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮২ হাজার ১শ’ ৮৯ জন।
হবিগঞ্জ-২ আসনের অন্য দলের প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির শংকর পাল (লাঙ্গল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এডভোকেট মনমোহন দেবনাথ (গামছা), ইসলামী ঐক্যজোটের শেখ হিফজুর রহমান (মিনার), তৃণমূল বিএনপি’র খায়রুল আলম (সোনালী আঁশ), বিএনএম’র এসএএম সোহাগ (নোঙর), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহম্মদ আব্দুল হামিদ (চেয়ার) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস এর প্রার্থী মো. জিয়াউর রশীদ (ডাব)।


     এই বিভাগের আরো খবর