,

হবিগঞ্জে ঈগলের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা ও লাঙ্গলের ৩ প্রার্থী

জাবেদ তালুকদার : জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতৃত্বে বিচ্ছিন্ন মিছিল ও পিকেটিং অনুষ্ঠিত হলেও আইন শৃংখলা বাহিনী বেষ্ঠিত নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলবে। হবিগঞ্জ জেলার ৪টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন ২ প্রার্থী। কেন্দ্রীয় সমঝোতায় ২৬টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে জেলার ১টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবুকে ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এখানে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া ডা. মুশফিকুর রহমান চৌধুরী। এ আসনসহ হবিগঞ্জের ৪টির মধ্যে ৩টি আসনেই তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। হবিগঞ্জ ৩ (সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. আবু জাহির শতভাগ নিরাপদে থাকলেও জেলার বাকি ৩টি আসনে কঠিন লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এড. আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহি সদস্য ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। পরে শরিকদের এ আসন ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। তবে সমঝোতায় আসনটি পেলেও নানা কারণে স্বস্বিতে নেই জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ আসনটি ছাড়লেও ভোটের মাঠে রয়েছেন আরেক হেভিয়েট প্রার্থী এড. আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। এছাড়া নানা কারণে জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা নড়বড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিতেও রয়েছে ব্যাপক দলীয় কোন্দল। কয়েক গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে আনুষ্ঠাকিভাবে জাতীয় পার্টির রওশন পন্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী এড. আমাতুল কিবরিয়াকেয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার ঘোষনা দেয়। সবমিলিয়ে বেশ বেকায়দায়ই রয়েছে জাতীয় পার্টির এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। আমজনতার প্রার্থী হিসেবে মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে এড. আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর নাম। এড. আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর নির্বাচনী প্রতীক ঈগলে ভোট দেয়ার জন্যই ভোট কেন্দ্রে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাধারণ ভোটার। হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের মোস্তাক আহমেদ ফারহানী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এড. মোঃ নুরুল হক (গামছা) প্রতিক। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৬ জন, মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৪৪ জন এবং হিজড়া ২ জন। মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৭৭টি। নির্বাচনী এলাকার বাহুবলে রয়েছে ৭টি ইউনিয়ন। ওই উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬২২ জন ভোটার রয়েছেন। অপর দিকে, নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮০০ জন।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ) উপজেলা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকায় স্বাধীনতার পর অধিকাংশ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসছেন। যার জন্য আসনটি নৌকার ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। তবে এবারের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন ৩ বার নৌকা নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য এড. আব্দুল মজিদ খাঁন। হবিগঞ্জ-২ আসনে এবার মূল লড়াইটা হবে তরুণ আর প্রবীণের মধ্যে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন এ আসনের প্রয়াত সর্বদলীয় নেতা সংসদ সদস্য এড. শরীফ উদ্দিন আহমদের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন লড়ছেন ৩ বারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি এড. আব্দুল মজিদ খান। নৌকার ভোটে অনেকটা ভাগ বসাবেন মজিদ খান। ফলে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে মনে করছেন ভোটাররা। হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এড. মনমোহন দেবনাথ (গামছা), ইসলামী ঐক্যজোটের শেখ হিফজুর রহমান (মিনার), তৃণমূল বিএনপি’র খায়রুল আলম (সোনালী আঁশ), বিএনএম’র এসএএম সোহাগ (নোঙর), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহম্মদ আব্দুল হামিদ (চেয়ার) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস এর প্রার্থী মো. জিয়াউর রশীদ (ডাব)। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৬ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮২ হাজার ১৮৮ জন। মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৫০টি। উপজেলা ভিত্তিক দেখা যায়- বানিয়াচংয়ে ১৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫২ জন এবং আজমিরিগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৪৮২ জন।
হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার সঙ্গে নেই কোনো শক্তিশালী প্রার্থী। এ আসনে ৩ বারের এমপি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. মোঃ আবু জাহির চতুর্থ বারের মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রভাবশালী এ নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কাগজে কলমেই প্রার্থী হিসেবে কয়েকজন রয়েছেন। তারা হলেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত মোঃ আবদুল ওয়াহেদ (চেয়ার), বিএনএম এর মোঃ বদরুল আলম সিদ্দিকী (নোঙ্গর), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মোঃ আদম আলী (ফুলের মালা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোঃ আব্দুল কাদির (আম), জাকের পার্টির আনসারুল হক (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ নোমান হাসান (ডাব), মুক্তিজোট (জেডিপি) এর মোঃ শাহিনুর রহমান (ছড়ি) প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮১ জন। কেন্দ্র সংখ্যা ১৩১টি। শায়েস্তাগঞ্জে ৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৫৩ হাজার ৯৫২, সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৬৫০ এবং লাখাই উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯ জন ভোটার রয়েছে।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর ও চুনারুঘাট) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সাবেক আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এ দু’জনের পাশাপশি জাতীয় পার্টির আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আল আমিন (ডাব), ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশের আবু ছালেহ (মিনার), বিএনএমের মো. মুখলেছুর রহমান (নোঙ্গর), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আব্দুল মমিন (চেয়ার) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐকজোটের মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন (ছড়ি) মাঠে রয়েছেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন। কেন্দ্র সংখ্যা ১৭৭টি। নির্বাচনী এলাকার মাধবপুরে ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৬২ এবং চুনারুঘাটে ১০টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪৬ জন।


     এই বিভাগের আরো খবর