,

নবীগঞ্জে বেজে উঠেছে উপজেলা নির্বাচনের ধামামা :: মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য ২০ প্রার্থী

জাবেদ তালুকদার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন নবীগঞ্জের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেকেই আগাম শুভেচ্ছা ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার প্রচারণা করতেও দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন এমন সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীর নাম বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এবারে উপজেলা পর্যায়ে কোন দলের কারা হবেন প্রার্থী, সেই হিসাব-নিকাশ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার ঝড় বইছে।
বিএনপি নির্বাচনে না আসার ব্যাপারে ঘোষণা দিলেও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ারও গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যমে এমন তথ্য জানিয়েছেন ইসি মো. আলমগীর। এসএসসি পরীক্ষা ও রোজার বিষয়টি চিন্তা করে এই সময় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইসি সূত্রমতে ঈদের পর অনুষ্ঠিত হতে পারে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নবীগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮০০ জন।
২০১৯ সালে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৪৭ হাজার ২৩০ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এড. আলমগীর চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ১১৩। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবারও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু, সাবেক এমপি এড. আব্দুল মোছাব্বির’র পুত্র হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সুলতান মাহমুদ, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ডাঃ শাহ আবুল খায়ের, শ্রীমতপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক শেখ মোস্তফা কামাল (আবু তালিব) জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ.কে.এম নুর উদ্দিন চৌধুরী (বুলবুল), উপজেলা নির্বাচন নিয়ে হাট-বাজার, চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা সামলোচনা করছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে গণসংযোগ-মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন সরকার দলীয় আওয়ামীলীগ প্রার্থীসহ উল্লেখিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক মুখরিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের পোষ্টে।
এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এড. গতি গোবিন্দ দাশ। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, লন্ডন প্রবাসী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ কভেন্ট্রি শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী অনর উদ্দিন জাহিদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ওবায়দুল কাদের হেলাল, উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি শেখ শাহনুর আলম ছানু, হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুরাদ আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ ফয়ছল তালুকদার, ফ্রান্স প্রবাসী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক এবং আব্দুল হক তালুকদার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিলু মিয়া তালুকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ ফয়ছল তালুকদার, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আলমগীর চৌধুরী সালমান, সাবেক সভাপতি পারভেজ চৌধুরী ফয়েজ, উপজেলা যুবলীগ নেতা মোঃ হেলাল চৌধুরীর নাম শুনা যাচ্ছে।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক মহিলা মেম্বার শেখ সইফা রহমান কাকলী। এর মধ্যে শেখ সইফা রহমান কাকলী প্রচারপত্র লিফলেট, স্টিগার সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, কর্মী-সমর্থকদের সাথে কুশল বিনিময়সহ ঘুরছেন শহরে, গ্রামে-গঞ্জে এবং পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রতিদিই।
এদিকে, সম্প্রতি আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, উপজেলা নির্বাচন করার সময় যেটা, সে সময়টা চলে এসেছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এরপর রোজা। রোজার মধ্যে তো নির্বাচন করা সম্ভব না। ঈদের পরপরই যাতে নির্বাচন হয় সেইভাবে আমরা প্রস্ততি নিচ্ছি। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করবো। রোজার শেষের দিকে তফসিল হতে পারে জানিয়ে ইসি আলমগীর বলেন, ঈদের কিছুদিন আগে তফসিল হতে পারে। আর নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচন ঈদের পরে হবে।
কত আসনে নির্বাচন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সবগুলো উপজেলা পরিষদে নির্বাচন সম্ভব হবে না। প্রায় ৪ শতাধিক পরিষদে নির্বাচন হবে।
২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার ৩ উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখেন। এবারের উপজেলায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর