,

রমজানে ফলসহ নিত্যপণ্যে দাম আকাশঁেছায়া :: তদারকির দাবি

জুয়েল চৌধুরী : রমজান মাসটি পুণ্যের হলেও প্রতি বছর বেশি মুনাফার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। লাভ করতেও মরিয়া হয়ে উঠেন তারা। এটি যেনো রীতিতে পরিণত করেছে ব্যবসায়ীরা। ব্যতিক্রম ঘটছে না এবারও। সারাদেশের ন্যায় এবারও হবিগঞ্জে রমজানের শুরুতেই নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা। সরকার বা প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা আশ্বাস দিলেও সম্ভব হচ্ছে না। ছোলা, বেগুন, লেবু, মাছ-মাংস, ফল, দুধ, ডিম, কলা, সব ধরণের সবজি প্রায় সবই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের খরচ আরও বাড়তে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই চিড়েচ্যাপ্টা সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ। তার ওপর রোজাকে ঘিরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী গতি এ চাপকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রমজান মাসের বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সাধারণ মানুষ।
হবিগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রোজার সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই ছোলাসহ সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। খেজুরের দরও লাগামহীন। চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম যদিও কিছুটা কমেছে, কিন্তু তা যৎসামান্য। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও চড়া। দাম বাড়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি চিড়া-মুড়িও। সবজির মধ্যে ইতোমধ্যেই বেগুন, শসা, লেবুসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এমনকি বাড়ানো হয়েছে দুধ, কলাসহ বিভিন্ন ফলেরও।
বাজারে এখন এক কেজি সাধারণ মানের খেজুরের দাম ৪৫০-৫০০ টাকা, ভালো মানের খেজুর ৫৫০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
অন্যদিকে, রমজানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ছোলা বিক্রি হয় ১২০-১৪০ টাকা কেজি, অ্যাংকর ৯০-১২০ টাকা, খেসারির কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা, ডালের মধ্যে প্রতি কেজি মোটা, মাঝারি ও সরু দানার মসুর ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রকারভেদে পেয়াজ ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি আদা ৪০০ টাকা, চায়না রসুন ২৫০ ও দেশি রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার ১৮০-২৫০, সোনালী ২৮০-৩৫০, দেশি মুরগী ৫০০-৫৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে রমজানের দুইদিন আগে বিক্রি হলেও এলাকাভেদে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১৫০০ টাকায়।
কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-১০০, শসা ৮০-১০০, মুলা ৩০-৫০, ঝিঙে ৮০, বেগুন ১০০, পেঁপে ৫০, লাউ প্রতি পিস ৫০, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০, টমেটো প্রতি কেজি ৫০-১০০, ফুলকপি ৫০-৬০, আলু ৩৫-৫০, কাঁচা মরিচ ৬০-১৫০, গাজর ৪০-১০০ ও শিমের বিচি ১০০-১৫০, লেবুর হালি ২০-১০০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৪০, চাষের শিং মাছ ৪৮০ থেকে ৫০০, রুই ৩২০ থেকে ৩৫০, চাষের কই ৩০০, দেশি ছোট কই ৬০০ থেকে ৭০০, পাবদা মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০, শোল মাছ একটু বড় সাইজের ৯০০, চিংড়ি ৮০০, কাতলা মাছ ৩২০ থেকে ৩৫০, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ ও টেংরা মাছ ছোট সাইজের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফলের বাজারে রীতিমতো আগুন। রোজার ১ম দিনে প্রতি কেজি কমলা, আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, ডালিম, নাশপাতিসহ মৌসুমী ফল ৫০০-১০০ টাকা বেড়েছে। এ নিয়ে ক্রেতাদের সাথে বিক্রেতাদের বাকবিতন্ডা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সবুজ নামে এক ক্রেতা বলেন, মাসের সীমিত বেতনে মাসের বাজার খরচ সামলাতেই ঘাম ছুটে যায়। সেখানে রোজাকে সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়েছে। রমজানে কীভাবে বাজার খরচ সামাল দেবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
অটোরিকশাচালক ছুরাব আলী বলেন, রোজাকে ঘিরে যে হারে দাম বেড়েছে তা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের পকেটে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। হতাশার সঙ্গে তিনি বলেন, রোজায় কী হবে জানি না!
প্রতিবছর রোজাকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতাকে ‘দুঃখজনক‘ বলে উল্লেখ করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপণ্যের দামে ছাড় দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেন। আর আমাদের এখানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। আমাদের দেশে এ সময়ে ভোক্তার পকেট কাটার প্রতিযোগিতা চলে। বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে একে একে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারের যে চিত্র, তাতে সঙ্গত কারণেই রোজার বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সাধারণ ভোক্তা।


     এই বিভাগের আরো খবর