,

চুনারুঘাটে গুরুত্বপূর্ণ মাটির সড়ক বাদ দিয়ে নির্মিত রাস্তায় এলজিইডির প্রকল্প

চুনারুঘাট প্রতিনিধি : চুনারুঘাটে জনগুরুত্বপূর্ণ মাটির সড়ক বাদ দিয়ে ডিডিএমের নির্মিত রাস্তায় এলজিইডি নতুন প্রকল্প দেয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এলজিইডির এ দায়সারা কর্মকাণ্ডে সরকারের প্রায় ২১ লাখ টাকা লোকশান হবে বলে জানা গেছে।
উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের খেতামারা আব্দুল আলীমের দোকান থেকে সোনাচং বাজার গ্রামীণ সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার ডবল লেয়ার ইট দ্বারা নির্মিত এইচবিবি রাস্তাটি এখনো চলাচলের উপযোগী হলেও অদৃশ্য কারণে সেই রাস্তা পাকাকরণের জন্য কাজ করছে এলজিইডি। অথচ পাশ্ববর্তী জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক গাজিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকট পাকা রাস্তার শেষ প্রান্ত হতে আলীনগর ও আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জনতার বাজার ভায়া গোদারাঘাট পর্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ কাঁচা রাস্তা বাদ দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নির্মিত ফাঁড়ি রাস্তা পাকাকরণের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি )।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রয়োজন ছাড়াই চলছে ভালো রাস্তার কাজ। এটি অর্থ আত্মসাতের ফন্দি ছাড়া কিছুই নয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি দুই বিভাগ একই জাগায় প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনা। এক্ষেত্রে দৈত্বতা এবং অর্থের অপচয় হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাজিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকট পাকা রাস্তার শেষ প্রান্ত হতে আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভায়া জনতা পর্যন্ত রাস্তাটি ১৬ থেকে ১৮ ফুট প্রশস্ত, যা ইউনিয়নের মূল সড়ক। পক্ষান্তরে ডিডিএম কর্তৃক ২০১৯ সালে নির্মিত এইচবিবি রাস্তাটি গ্রামীণ ফাঁড়ি সড়ক। সেই রাস্তাটি এখনও মেরামত বা সংস্কারের উপযোগী হয়নি।
এদিকে একই রাস্তায় দ্বিতীয় প্রকল্প না নিতে চুনারুঘাট উপজেলার তৎকালীন ইউএনও সিদ্ধার্থ ভৌমিক এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছিলেন। ফলে কিছুদিন কাজের উদ্যোগ বন্ধ করলেও সম্প্রতি সেই রাস্তায় কার্পেটিং করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এলজিইডি। এ রাস্তা বাস্তবায়ন করলে সরকারের প্রায় ২১ লাখ টাকা গচ্ছা যাবে।
জানা গেছে, একই রাস্তায় দ্বিতীয় প্রকল্প ঠেকাতে ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই ডিডিএমের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান চিঠি পাঠিয়েছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর।
এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সভায় ২ কিলোমিটার দৈর্ঘের কম গ্রামীণ মাটির রাস্তা উন্নয়ন করার দায়িত্ব ডিডিএম এর এবং তদূর্ধ্ব রাস্তা উন্নয়ন করবে এলজিইডি। এছাড়াও ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক সভায় একই রূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দেশব্যাপী মাঠপর্যায়ে এরূপ জটিলতা নিরসনে ডিডিএম এর মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে একনেক সভা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিডিএম নির্মিত এইচবিবি রাস্তায় প্রকল্প গ্রহণ না করতে অনুরোধ জানান। এলজিইডি একনেক ও পরিকল্পনা সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এইচবিবি রাস্তার উপর প্রকল্প গ্রহন করে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গরা।
গাজিনগর গ্রামের সৈকত আলী নামের এক বাসিন্দা বলেন, গাজিপুর ইউনিয়নের গাজিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকট পাকা রাস্তার শেষ প্রান্ত হতে আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভায়া জনতার বাজার পর্যন্ত রাস্তা খানা-খন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই ঘটে ব্যাপক জনদুর্ভোগ। এ সড়ক বাদ দিয়ে ভালো এইচবিবি রাস্তায় এলজিইডির কাজ গ্রহণের উদ্যোগকে ধিক্কার জানাই। তিনি জানান, এখানে মূল উদ্দেশ্য, আসলে এইচবিবি রাস্তার ইট বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করা।
মধু মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এইচবিবি রাস্তায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ভালো রাস্তা ভেঙ্গে এলজিইডি নতুন রাস্তা করছে। কতিপয় অফিসারদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সরকার ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
চুনারুঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্লাবন পাল বলেন, ‘আমরা এলজিইডিকে এইচবিবি রাস্তার অংশটুকু বাদ দিয়ে পাশ্ববর্তী জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় প্রকল্প গ্রহন করতে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা এতেও কর্ণপাত করেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সাড়ে ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে এই রাস্তাটি নির্মাণ করেছিলাম। বর্তমানে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে। কিন্তু এলজিইডি কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে রাস্তার ওপর রাস্তা তৈরি করলে বিপুল পরিমাণ ইট মিসইউজ হতে পারে। এতে সরকারের ক্ষতি হবে। আর দুই কিলোমিটারের নিচের রাস্তা এলজিইডি করার কথাও নয়।’
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহবুব আলম মাহবুব বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই । তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন, কীভাবে এটার সমাধান করা যায়।
চুনারুঘাট উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার আবুল কালাম জানান, এখানে সরকারি টাকা অপচয় হবে না। পুরনো কাজের ইট বাবদ ১৬ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে। পাশের কাঁচা রাস্তাটিও নির্মাণ করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর