,

ধর্ষক শামীম কারাগারে থাকলেও সহযোগিরা গান করছে কাফেলায়

জুয়েল চৌধুরী : বাউল শিল্পীকে ধর্ষণের ঘটনায় কাফেলার মালিক দেওয়ান শামীমের জামিন না মঞ্জুর করা হলেও এখনও পলাতক রয়েছে তার অন্যতম সহযোগি পপি, ইতি, রমিজ আলী। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে গান বাজনা করলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। এ ছাড়াও তাদেরকে যারা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করতো তারাও গা ঢাকা দিয়ে আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, মিরপুরের দেওয়ান মালেক, নতুন ব্রিজের হোসেন মিয়া, ফরহাদ, হবিগঞ্জ শহরের ফুল মিয়া, পশ্চিম ভাদৈ গ্রামের সজলু মিয়া, তারা বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের এনে বাউল গানের পাশাপাশি ফাট বাসা ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতো। আর এগুলো ভিডিও করে যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে শহরের ধন্যাঢ্য যুবকদের ব্লেক মেইল করতো। তারা বাউল গান আয়োজন করে কাফেলার নামে বিত্তশালী লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি উপস্থিত সময়েও নারী শিল্পীরা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে আকৃষ্ট হয়ে যুবসমাজ তাদের টাকা দেয়। আর এ টাকার অর্ধেক ভাগ তারা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে পুলিশের কাছে সকল তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে শামীম।
জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরে চ্যানেল আইয়ে গানে সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে কিশোরীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে কাফেলার মালিক দেওয়ান শামীম (৪০) কে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। এ সময় তার সহযোগী অন্য শিল্পী উমেদনগর গ্রামের মারাজ মিয়ার কন্যা সীমা আক্তার পপি ও রাজনগর এলাকার ইতি সরকার এবং রমিজ আলীসহ অন্যরা পালিয়ে গেছে।
গত শুক্রবার বিকালে সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মুসলেহ উদ্দিনের নির্দেশে এসআই মমিনুল ইসলাম পিপিএমসহ একদল পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শামীমকে পুটিজুরী ভাই ভাই ফার্নিচারের দোকান থেকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। যাতে বিভিন্ন শিল্পীর সাথে তার অশ্লীল ভিডিও পাওয়া যায়। সে বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের চক মন্ডল গ্রামের সিরাজ মিয়ার পুত্র।
এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা উমেদনগর গ্রামের সিরাজ মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদি হয়ে নারী নির্যাতন ও পণ্যগ্রাফি আইনে সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় উমেদনগর গ্রামের মারাজ মিয়ার কন্যা বাউল শিল্পী সীমা আক্তার পপি ও রাজনগর এলাকার ভাড়াটিয়া বাবলু মিয়ার কন্যা ইতি সরকার।
জানা যায়, সেলিনার কন্যা হবিগঞ্জ উমেদনগর হাই স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী (১৫) এর সাথে পরিচয় হয় বাউল শিল্পীদের কাফেলার মালিক দেওয়ান শামীমের সাথে। সে ওই ছাত্রীর ওপর কুনজর দেয়। সে চ্যানেল আইয়ে গানের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে ওই ছাত্রীকে রাজনগর এলাকার বাবলু মিয়ার ভাড়াটিয়া বাসায় ইতি সরকার ও পপির সহযোগিতায় সেখানে নিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। এরপর থেকে তাকে হুমকির মাধ্যমে একইভাবে ধর্ষণ করে লম্পট শামীম। এক পর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে শামীমের কথায় আর রাজি হয়নি। গত ২৬ মার্চ শামীম তাকে আবারও ওই বাসায় নিয়ে যেতে চায়। এতে সে রাজি না হলে ধর্ষণের ভিডিও বিভিন্ন মোবাইল ও যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। এতে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিলে তার পিতা-মাতা রক্ষা করে থানায় এসে মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এদিকে আসামি গ্রেফতার করায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে শামীম পুলিশের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। এমনকি ২২ ধারার জবানবন্দিতে ওই ছাত্রী রমিজ আলীর নাম প্রকাশ করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত শনিবার বিকালে শামীম কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে দেওয়ান শামীম গ্রেফতারে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে এলেও তার সহযোগিরা এখনও অধরা রয়েছে। পুলিশ তাদের আটক করছে না। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের নিকট দ্রুত তার অপর সহযোগিদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এসআই মমিনুল ইসলাম জানান, পপি, ইতিসহ অন্যদের ধরতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান করা হয়েছে। কিন্তু তারা পালিয়ে যায়। তারা অচিরেই ধরা পড়বে।


     এই বিভাগের আরো খবর