স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জে বিয়ে পাগল এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সর্বনাশ হচ্ছে অসংখ্য মহিলার। ওই প্রতারক নিজেকে কখনো লন্ডন প্রবাসী কিংবা বিত্তবান দাবি করে সহজ সরল মহিলাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে ও তালাক প্রদানের মাধ্যমে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতারণার শিকার কয়েকজন মহিলা এ বিষয়ে তার উপর বিজ্ঞ আদালতে মামলাও করেছেন। জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তফাপুরের মৃত রকিব উল্লার পুত্র মোঃ মইনুল মিয়া (৪০) একসময় লন্ডন ছিলো। পিতার সুবাদে সে লন্ডন যাবার পর সেখানে বিয়ে করে জ্যোৎস্না নামের এক মহিলাকে। ওই সংসারে তার ৪টি পুত্র-কন্যাও রয়েছে। ব্রিটেনে স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ার কারনে স্ত্রী মইনুলকে তালাক দেয়। এরপর মইনুল দেশে চলে আসে। দেশে এসে লন্ডনী হওয়ার সুবাদে একের পর এক বিয়ে করতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে বিয়ের পর ওই প্রতারক বিয়ে পাগল মইনুল শশুরালয় থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন সংসার করার পর নয়া স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় নতুন বিয়ে করে। এ পর্যন্ত- প্রতারক মইনুলের ১৭টি বিয়ে করেছে বলে তার সর্বশেষ স্ত্রী জাহেরা বেগমের তথ্যমতে পাওয়া গেছে। উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদের মৃত তাজ উল্লার কন্যা জাহেরা বেগম জানান, গত ১৭ এপ্রিল মইনুল তাকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। হবিগঞ্জে নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে মইনুল ও জাহেরার সম্মতি ও স্বারে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে জাহেরাকে লন্ডনে মইনুলের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও পুত্র-কন্যার কথা জানায় মইনুল। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই জাহেরা জানতে পারে প্রতারক মইনুল একই উপজেলার বাউসা ইউপির হরিধরপুরের মৃত আরজু মিয়ার কন্যা আম্বিয়া বেগমকেও সে বিয়ে করে ২০০৮ সালে। এক বিলেত প্রবাসীর স্ত্রী আম্বিয়া বেগম স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্রকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার আগিউনে বসবাস করতেন। প্রতারক মইনুল বেশ কিছুদিন আম্বিয়ার বাড়িতে গিয়ে মৃত স্বামীর করা আবেদনের প্রেেিত আম্বিয়া ও তার পুত্রকে লন্ডন পাঠাতে পারবে বলে প্রতিশ্রূতি দেয়। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় আম্বিয়াকে প্রতারক মইনুল। পুত্রর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাজি হয় আম্বিয়া। কিন্তু কথা মতো কোন কাজ করতে পারেনি মইনুল। এরই মধ্যে আম্বিয়ার নিকট থেকে মইনুল নিজে লন্ডন যাবার কথা বলে ৩ লক্ষ টাকা নেয়। টাকা নিয়ে উধাও হয় মইনুল। তখন প্রতারক মইনুলের উপর হবিগঞ্জের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যতন দমন আদালতে মামলা করেন স্ত্রী আম্বিয়া বেগম। এ মামলায় ৩ মাস কারাভোগ করে। স্ত্রী আম্বিয়ার সাথে সমঝোতা হলে স্ত্রী আম্বিয়া বেগম মইনুলকে জামিনে আনে। কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলার পর মইনুল আবার উধাও হয়। এরপর এনাতাবাদের জাহেরাকে বিয়ে করে মইনুল। বিয়ের পর প্রতারক মইনুল লন্ডন যাবার কথা বলে নগদ ৭০ হাজার টাকা নেয়। ওই বিয়ের খবর পেয়ে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল আদালত ৫-এ মামলা করে আম্বিয়া বেগম। কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত প্রতারক মইনুলকে জেলহাজতে প্রেরন করেন। এ সময় স্ত্রী জাহেরা বেগম স্বামী মইনুলকে জেল থেকে জামিনে আনে। জামিনে আসার পর প্রতারক মইনুল লন্ডনের কাগজপত্র ঠিক করা ও হরিধরপুরের মুজিবের মাধ্যমে বিদেশ যাবার কথা বলে জাহেরাকে ফুসলিয়ে গত ১৮ অক্টোবর (শনিবার) নগদ ৫০ হাজার টাকা নেয় প্রতারক মইনুল। টাকা নিয়ে মইনুল জাহেরার বাংলাবাজারের বাসা থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। পরদিন সকালে জাহেরাকে ফোন দিয়ে বলে আম্বিয়া তাকে (মইনুলকে) আটকে রেখেছে। খবর পেয়ে জাহেরা নবীগঞ্জ থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে হরিধরপুর আম্বিয়াদের বাড়ি যায়। প্রতারক মইনুল পুলিশ যাওয়ার আগেই পালায়। জাহেরা বেগম জানিয়েছেন গতকাল (মঙ্গলবার) আম্বিয়া বেগম তাকে ফোনে বলেছেন মইনুল টাকা নিয়ে জাহেরাকে তালাক দিয়েছে। এ খবর শোনে জাহেরা এখন দিশেহারা। প্রতারক মইনুলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করবেন বলে জাহেরা বেগম জানিয়েছেন।
Leave a Reply