,

নবীগঞ্জে ছেলে-মেয়েসহ মায়ের দাফন সম্পন্ন ॥স্বামী ফরিদকে জেল হাজতে প্রেরন

রাকিল হোসেন ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর গ্রামে ছেলে-মেয়েসহ মায়ের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে গ্রামসহ এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গত রোববার রাতে ছেলে-মেয়েসহ মায়ের লাশ হবিগঞ্জে ময়না তদন্ত শেষে রুমেনার বাবা উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের মামদপুর গ্রামের মাসুক মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় মামদপুর গ্রামেই গ্রাম্য কবর স্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ আটককৃত স্বামী ফরিদ মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে রুমেনার চাচা আশুক মিয়া বাদী হয়ে ফরিদ উদ্দিনসহ ৬ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অন্য আসামীরা হলেন, ফরিদ উদ্দিনের দুই ভাই বোরহান উদ্দিন ও শাহাব উদ্দিন, রুমেনার জা ফাতেমা বেগম এবং দুই প্রতিবেশী তারা মিয়া ও আফজল মিয়া। মামলায় উল্লেখ করা হয়, রুমেনার স্বামী ফরিদ উদ্দিন এর সাথে অপর এক মেয়ের সম্পর্ক ছিল। এ ব্যাপারে রুমেনা প্রতিবাদ করলে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই ঘটনাটি ঘটেছে। উল্লেখ্য, উপজেলার বড় ভাকৈর গ্রামের বর্গাচাষী ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রুমেনা খাতুনকে (৩০) গাছের সাথে ঝুলন্ত ও তাদের মেয়ে মুসলিমা খাতুন (৭) ও ছেলে মুছা মিয়া (৫) এর লাশ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। লোমহর্ষক এ ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। রুমেনার পরিবারের দাবি স্বামী তাদেরকে হত্যা করেছে। এদিকে ফরিদ উদ্দিনের দাবী রুমেনা দু’সন্তানকে পুকুরে ফেলে পরে সে আত্মহত্যা করে। গত শনিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে ফরিদ মিয়া ও তার স্ত্রী সন্তানরা অন্যান্য দিনের মতো ঘুমিয়ে পড়েন। রাত অনুমান ৩ টার দিকে ফরিদ মিয়া দেখেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা তার পাশে নেই। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে পাশে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন ফরিদ মিয়া। এক পর্যায়ে তিনি বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে একটি জারুল গাছে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় তার স্ত্রীর ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পান। তারপর পাশেই পুকুরে দুই সন্তানের মৃতদেহ পানিতে ভাসতে দেখেন তিনি। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে পাঠায়। সেই সাথে স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। দু’সন্তানসহ মায়ের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চলে নানামুখী আলোচনা। এদিকে রুমেনার স্বামী ফরিদের দাবি রুমেনা মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্থ ছিলেন। রাতে এক সাথে ঘুমিয়ে পড়ার পর স্ত্রী সন্তানদের পুকুরে ফেলে নিজেও আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করেন ফরিদ মিয়া। অপরদিকে রুমেনার বাবা উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের মামদপুর গ্রামের মাসুক মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। প্রায় ২মাস আগে দাম্পত্য কলহের জের ধরে রুমেনা তার দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। সালিসে মীমাংসার মাধ্যামে সে আবার স্বামীর বাড়ি আসে। রুমেনার বাবাও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দাবী রুমেনার স্বামী ফরিদ মিয়া তাদেরকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক মঞ্চস্থ করেছে। রুমেনার চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া জানান, ভোর ৫টার দিকে রুমেনার দেবর বোরহান উদ্দিন ফোনে তাদের জানায়, ফরিদ মিয়া তার স্ত্রী রুমেনা ও দু’সন্তানকে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে বোনের বাড়ি ভাকৈর গ্রামে ছুটে আসি। এ সময় বোনের মৃত দেহ ঝুরন্ত অবস্থায় এবং দু’অবুঝ সন্তানের মৃতদেহ ঘরে ভিতরে পড়ে থাকতে দেখি। পানিতে ভিজানোর কোন আলামত পাওয়া যায়নি বলেও দাবী শাহীনের। শাহীন বলেন, তার বোন ও সন্তানদের স্বামী ফরিদ উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে। তারা এ ঘটনায় সুষ্টু তদন্তসহ ঘাঁতকদের ফাঁসির দাবী জানান। এদিকে ফরিদ উদ্দিন এর বৃদ্ধ মা আয়ফুল বিবি জানান, ফরিদ উদ্দিন তার ১৫ বছরের বিবাহিত জীবনে বিয়ের ১২ বছর পর তাদের কুল জুড়ে আসে দু’টি সন্তান। অনেক সাধনায় পাওয়া দু’টি সন্তান ও তার স্ত্রীকে ফরিদ হত্যা করতে পারেনা। তিনি ঘটনার সুষ্টু তদন্তের দাবী জানিয়ে রহস্যে উদঘাটনে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেহের আলী মালদার লোমহর্ষক এই ঘটনার সুষ্টু তদন্তক্রমে দোষীদের শাস্তির দাবী জানান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আশিকুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.