March 22, 2025, 7:38 pm

বানিয়াচংয়ে ছাত্রীর চোখ দিয়ে ঝরছে পাথর!

বানিয়াচং প্রতিনিধি ॥ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মুর্শেদা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার স্কুলের কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল তানিয়া। এ সময় তার চোখ দিয়ে একটি পাথরের কণা বের হয়। এই দৃশ্য বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আতঙ্কে আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়। অন্যান্য শিক্ষককে ঘটনাটি জানালেও তারাও অবাক হন। সহকারী শিক্ষক ফজল উল্লাহ খান জানান, বুধবার সকালে নিজ চোখে দেখেছেন তানিয়ার চোখ দিয়ে পাথর বের হতে। এ সময় তানিয়ার চোখের পাশ ফুলে উঠছিল। যখন পাথর বের হয় তানিয়ার চেহারা দেখে মনে হলো সে অনেক ব্যথা অনুভব করছে। পাথর বের হওয়ার পর চোখটি দেখতে স্বাভাবিক লেগেছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলামকে জানিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার জানান. তানিয়া তিন মাস ধরে স্কুলে অনুপস্থিত। অভিভাবকসহ তানিয়াকে স্কুলে ডেকে আনা হয়। এ সময় তার মা সুহেনা বেগম চোখ দিয়ে পাথর ঝরার ঘটনাটি বললে বিশ্বাস করিনি। মায়ের কথা শুনে মনে হলো স্কুল ফাঁকি দেয়ার অজুহাত। কিন্তু মঙ্গল ও বুধবার দুই দিন স্কুলের শ্রেণিকক্ষে তার সহকর্মীরা নিজ চোখে তানিয়ার চোখ দিয়ে পাথর ঝরার এ দৃশ্য দেখেছেন। ঘটনাটি শুনে তিনি আশ্চর্য হয়ে পড়েন। ছাত্রী তানিয়ার মা সুহেনা বেগম জানান, কয়েক মাস পূর্বে বাড়ির পাশে এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে গেলে তার এক সহপাঠী ঢিল ছুড়ে মারে। তখন তানিয়ার চোখে আঘাত লাগে। কদিন পর তানিয়ার চোখ দিয়ে পাথর পড়তে থাকে। মাঝেমধ্যে গাছের পাতা ও মাটির কণা বের হয়। তিনি জানান, নিত্যদিন নয়, দু’তিন দিন পরপর চোখ দিয়ে এই পাথর ও পাতা ঝরে। যখন বের হয় ৩ থেকে চারটি পাথরের কণা বের হয়। তানিয়ার মা জানান, হবিগঞ্জ শহরের নজরুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসকের কাছে তানিয়ার চোখ দেখালে চিকিৎসক জানান কিছুই হয়নি। পরে এক কবিরাজের শরণাপন্ন হন তারা। কবিরাজ বলেছে ‘চোখে চালান লেগেছে’। কবিরাজি চিকিৎসায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা খরচ করেছেন। এরপরও পাথর ঝরা থামছে না। বানিয়াচং হাসপাতালে এক সেমিনারে বিষয়টি জানতে পারেন ইউএনও মো.মামুন খন্দকার। তখন ইউএনওর কথায় ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্কুলশিক্ষক ও তানিয়ার মা সুহেনা বেগম। বানিয়াচং হাসাপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রিফায়েত হোসেন তার ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাসে বলেন, মেয়েটির (তানিয়া) বয়স ১০ বছর হবে। মেয়েটির চোখ দিয়ে পাথর বের হয় তার শিক্ষকরা দেখেছেন। হাসপাতালে নিয়ে এলে মেয়েটির সার্বিক পরীক্ষা নিরীক্ষার একপর্যায়ে ডা.আবদুর রহমান তাকে জিজ্ঞেস করেন তোমাকে কে চোখে পাথর রাখতে বলে? মেয়েটি এতে বেশ ভয় পায়। কান্নাকাটি করে। কান্নাকাটির কারণে জিজ্ঞেস করা হলে মেয়েটি একপর্যায়ে জানায়, সেটা বললে তাকে (তানিয়া) ছুরি মারা হবে। তাই সে বলবে না। এতে স্পষ্ট হয় মেয়েটি অডিও হ্যালোসিনেশনে ভুগছে। কেউ তাকে নির্দেশ করেছে আর সেটি পালন করছে। এটি একধরনের রোগ। সাধারণত সিজোফ্রেনিয়া রোগের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটতে পারে। গায়েবি নির্দেশনা শুনতে পায় তারা। সেই অনুযায়ী তারা কাজও করে। ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েটি এই রোগে আক্রান্ত। গায়েবি নির্দেশনা অনুযায়ী সে চোখের ভেতর সবার অগোচরে এমনকি নিজের অগোচরেও পাথর রেখে দিচ্ছে। উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বিরল নয়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগ সেরে উঠবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.