,

ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের হবিগঞ্জ প্যানাসিয়া ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় নবীগঞ্জের রোগীর মৃত্যু

মোঃ তাজুল ইসলাম ॥ হবিগঞ্জে প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালের গাইনি ডাক্তার সুস্মিতা ঘোষ এর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেশমা আক্তারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা গ্রামের নিহত সুমি বেগম এর পিতা কদ্দুছ মিয়া। মামলায় ওই ডাক্তার ছাড়াও আরও অজ্ঞাত ৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, ডাঃ সুস্মিতা ঘুষ প্রায় ২ বছর আগে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে মযমনসিংহ জেলায় বদলি করা হয়। তারপরও অফিস ফেলে অধিকাংশ সময়ই ওসমানী রোডে অজিত রায় ড্রাগ হাউজে ঔষধের দোকানে প্রায় প্রতিনিনেই প্রাইভেট চেম্বার করেন। সে সূত্র ধরে প্রায় সময়ই রোগীদের কৌশলে ভয় দেখিয়ে বাগিয়ে হবিগঞ্জ শহরের প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালে এনে সিজার করেন। তাদের নিকট থেকে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা। বাউসা গ্রামের কদ্দুছ মিয়ার অন্তসত্ত্বা মেয়ে সুমি বেগমকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ওই ডাক্তার তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গেলে উন্নত চিকিৎসা হবে বলেও তাদের আশ্বস্থ করেন। ফলে শুরু থেকেই তারা ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা করান। শেষ পর্যায়ে ডাক্তার পরামর্শ দেন প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে জানানোর জন্য। গত ১১ মে রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হলে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ডাঃ সুস্মিতা বিস্তারিত শুনে ওসমানীতে গেলে ভাল চিকিৎসা পাওয়া যাবেনা বলে রোগীর স্বজনদের জানান। তিনি তাদের বলেন, আমি সুমির চিকিৎসা করেছি। কাজেই আমি জানি বাচ্চার অবস্থান। সরকারি হাসপাতালের খবর আমার জানা আছে। ওসমানীকে কোনভাবেই ভাল চিকিৎসা হবেনা। প্রাইভেট চিকিৎসা করালে রোগীনির জন্য ভাল হবে। আমি নিজে অপারেশন করবো। এ জন্য ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। এ বলে তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য বলেন। পাশাপাশি প্রাইভেট চিকিৎসা করলে মা ও সন্তান সুস্থ এবং নিরাপদ থাকবে বলেও তিনি নিশ্চয়তা দেন। তার কথায় রোগীর স্বজনরা রাজি হলে তাকে সাথে নিয়ে জেলা শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কে প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালে যেতে বলেন। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটায় তারা ডাক্তার ও রোগীকে নিয়ে একটি অটোরিক্সায় প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথে অপারেশনের টাকা অগ্রীম দেয়ার দাবি করেন ডাক্তার। বলেন, এত রাতে অন্য ডাক্তারদের ঘুম থেকে উঠিয়ে আনতে গেলে আগেই পেমেন্ট দিতে হবে। পরে রোগীর স্বজনরা ১৩ হাজার টাকা অগ্রীম দেন। রাত সাড়ে ৩টায় হাসপাতলে পৌছে আরও ২শ’ টাকা এবং একটি কাগজে দস্তখত নেন। রাতেই অপারেশনের পর নবজাতককে রোগী সুমির বাবার কাছে দেন। তিনি এ সময় মেয়ের অবস্থা জানতে চাইলে ডাক্তার বলেন অবস্থা জানতে চাইলে আরও কিছু সময় লাগবে। কিছক্ষণ পরই এসে বলেন রোগীর অবস্থা আশংকাজনক। তাকে রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সে অজ্ঞান অবস্থায় আছে। সেখানে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসা পেলেই সুস্থ হয়ে উঠবে। দ্রুত তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে সন্দেহ হলে নবীগঞ্জে পৌছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, সে অনেক আগেই মারা গেছে। পরে তারা রোগীর মৃত্যু সংক্রান্ত কাগজপত্র চাইলেও প্যানাসিয়ার প্রধান কর্তৃপক্ষ বশির আহমেদ দুলাল তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত তারা ওই কাগজ আদালতে দেবে বলে জানান। এছাড়া নবজাতক শিশু’র অবস্থাও ভালোনয় মাথায় আঘাত জনিত কারণে সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিচিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে এর আগে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অপরিস্কারসহ একাধিক অভিযোগ করে স্থানীয়রা জানান, এ ক্লিনিকে কোন ডাক্তার নিয়মিত বসেন না। ব্রাদার তপন, আয়া, পিয়ন দ্বারা সব ধরনের পরিক্ষা নিরিক্ষা, প্রেসকিপশন করা হয়ে থাকে। সদর হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগীদের জোর করে ধরে এনে এখানে পরিক্ষা ও সিজার করা হয়ে থাকে। এ প্রাইভেট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অনুরোধ জানান নিহতের পিতাসহ আগত রোগী ও স্বজনরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.