,

হত্যা মামলার পরও রোগী দেখছেন বাসায়, রফাদফা করতে দৌড়ঝাপডাঃ সুস্মিতা ঘোষের কুটিঁর জোর কোথায়?

মোঃ জসিম তালুকদার ॥ ভুল চিকিৎসা করে প্রসূতি মা’কে হত্যা ও নবজাতক শিশুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নবীগঞ্জের এক সময়ের আলোচিত ও বির্তকৃত ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করার পরও ডাঃ সুস্মিতা ঘোষ প্রকাশ্যে নবীগঞ্জের বাসভবনে অবস্থান করে বীরদর্পে রোগী দেখছেন খবরে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তার কুটিঁর জোর নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেছেন। এছাড়া আলোচিত প্রসুতি মা’কে হত্যা ও নবজাতক শিশুকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাটি রফাদফা করতে বাদীর বাড়িসহ নানা স্থানে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন তার স্বামী ডাঃ বিল্পব কুমার সাহা ও তার আজ্ঞাবহ লোকজন। চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর থেকেই পুরনো দিনের ঘটনাসহ নতুন করে আলোচনার শিরোনাম হয়েছেন ডাঃ সুস্মিতা ঘোষ। নানা আলোচনার ঝড় বইছে নবীগঞ্জের সর্বত্র। উঠে এসেছে নবীগঞ্জ হাসপাতালে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে নানা অপকর্ম ও বড় শাখোয়া গ্রামের এক গৃহবধূ ওই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারানোর ঘটনা। তৎকালীন সময়ে থানায় অভিযোগও দেয়া হয়েছিল। পরে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আপোষে রক্ষা পেয়ে ছিলেন সুস্মিতা ঘোষ। চাঞ্চল্যকর বর্তমান গৃহবধু হত্যা মামলাটিও কি পুরনো কায়দায় শেষ হয়ে যাবে না কি আইনী পক্রিয়ায় এই নরঘাতক ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের বিচার হবে ? সচেতন মহল যখন এ সব নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলছেন, টিক তখনই খবর পাওয়া যায় বির্তকৃত ডাঃ সুস্মিতা ঘোষ গত ক’দিন ধরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মস্থল ফেলে রেখে নবীগঞ্জে অবস্থান করছেন। এবং নিজ বাসা শহরের ধানসিঁড়ি এলাকায় প্রকাশ্যে রোগী দেখছেন। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের স্বামী ডাঃ বিল্পব কুমার সাহাসহ তাদের আজ্ঞাবহ লোকজন নিয়ে বাদীর বাড়ি বাউসা গ্রামে যান। সেখানে বাদীর সাথে আপোষে রফাদফার অপচেষ্টা করছেন বলে জানাগেছে। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাউশা গ্রামের কুদ্দুছ মিয়া তার মেয়েকে হত্যা ও শিশুকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে- বাদী কুদ্দুছ মিয়ার কন্যা সুমি বেগম সন্তান সম্ভবা হলে তাকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। তখন রোগীকে দেখে ডাঃ সুস্মিতা বাদীকে বলেন উন্নত চিকিৎসা করতে হলে তার চেম্বারে নিতে হবে। রোগীকে চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। ডাঃ সুস্মিতা রোগী ও তার পিতাকে জানান প্রসব ব্যাথা শুরু হলে যেন তাকে জানানো হয় এবং পরামর্শ নেয়া হয়। গত ১১ মে রাতে সুমি বেগমের প্রসব ব্যাথা শুরু হলে তাকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। খবর পেয়ে ডাঃ সুস্মিতা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে সুমির পিতাকে বলেন ওসমানীতে ভর্তি করালে ভাল চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। সরকারি হাসপাতালের খবর জানা আছে। বাচ্চার পজিশন আমার ভাল জানা আছে। তাই তার তত্ত্বাবধানে কোন ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো হলে রোগীর ভাল হবে। তিনি নিজেই রোগীর অপারেশন করবেন এবং এতে ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। সুমির পিতা তখন ডাঃ সুস্মিতাকে বলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে উন্নত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসক আছেন। কাজেই ওখানেই চিকিৎসা ভাল হবে। কিন্তু ডাঃ সুস্মিতা তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করালে মা ও সন্তান সুস্থ ও নিরাপদ থাকবে বলে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তখন সুমির পিতা কুদ্দুছ মিয়া ডাঃ সুস্মিতাসহ একটি সিএনজি যোগে হবিগঞ্জ চলে আসেন। রাত ৩টা ৩০ মিনিটে হবিগঞ্জের প্যানাসিয়া মেডিএইডে পৌঁছেই সুমিকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চলে যান ডাঃ সুস্মিতা। কিছুণ পরই নবজাতক বাচ্চাকে এনে সুমির পিতার কাছে এনে তুলে দিয়ে ডাঃ সুস্মিতা জানান রোগীনি এখন অজ্ঞান আছে। কিছুক্ষণ পরই ডাঃ সুস্মিতা ওটি থেকে বের হয়ে বলেন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক তাকে সিলেট ওসমানীতে নিতে হবে। ওটি থেকে বের হলে মেয়ের কোন সাড়া শব্দ না দেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান রোগী অজ্ঞান অবস্থায় আছে। ওসমানীতে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করালেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। ওসমানীতে যাওয়ার পথে রোগীর অবস্থা দেখে সন্দেহ হলে নবীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার তখন জানান অনেক আগেই রোগী মারা গেছে। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়- ডাঃ সুস্মিতা তার সহযোগীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করে হত্যার আলামত গোপন করেছেন। উন্নত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসক ছাড়া রোগী ও বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে জানা সত্ত্বেও সুস্মিতা তড়িগড়ি করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সুমিকে হত্যা করেছেন। হত্যার বিষয়টি গোপন করে সুমিকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন। সিজার করার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও আসামী জেনেশুনে সুমিকে হত্যা করেছেন। নবজাতক বাচ্চাকেও মাথায় আঘাত করা হয়। বাচ্চাটি সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ডাঃ সুস্মিতা টাকার প্রলোভন দেন বলেও বাদী অভিযোগ করেন। বিজ্ঞ বিচারক মামলা অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য সহকারি পুলিশ সুপারকে (উত্তর) দায়িত্ব দিয়েছেন। নিহত সুমি বেগম নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোশাহিদ আলীর স্ত্রী। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ৩/৪ বছর পুর্বে ডাক্তার সুস্মিতা ঘোষ উপজেলার করগাওঁ ইউনিয়নের বড় সাকুয়া গ্রামের জনৈক গর্ভবতী রোগীকে নিজ চেম্বারে চিকিৎসা কালে ওই মহিলার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় তৎকালীন সময় নবীগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সে সময়ে নিহতের পরিবার থানায় অভিযোগ দেয়ার পর মামলার দায় থেকে বাচাঁর জন্য স্থানীয় ভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি আপোষে শেষ করেন। এত কিছুর পরও তার বেপরোয়া চিকিৎসা বন্ধ না করে বীরদর্পে প্রাইভেট চেম্বারে বসে রোগীদের নানা ভাবে হয়রানী করে আসছিলেন। তিনি প্রতিদিনই অসাধুপায়ে রোগীদের হবিগঞ্জের বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজারে সন্তান প্রসবের মাধ্যমে দু’ হাতে টাকা খামাই করতেন। এক পর্যায়ে প্রায় ২ বছর পূর্বে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ জেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় কিভাবে তিনি নবীগঞ্জ শহরের অজিত রায় ড্রাগ হাউসে চেম্বার করে প্রতিদিন রোগী দেখেন। তার খুঁটির জোর নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে। এছাড়া রোগীদের জটিল ও মারাত্মক রোগের কথা বলে মিথ্যে ভয় দেখিয়ে ইঞ্জেকশন দিতে হবে, ওয়াশ করতে হবে ইত্যাদি বলে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগও রয়েছে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার বলি গৃহবধু সুমি হত্যার বিচার দাবী করেছেন। এবং বর্তমান কর্মস্থল ময়মনসিংহ না থেকে নবীগঞ্জে অবস্থান করে নিয়মিত রোগী দেখার ঘটনাটি বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষন করেছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সুইচ অফ পাওয়া যায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.