,

হবিগঞ্জে কৃষকদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে হারভেস্টার

জাবেদ তালুকদার : সরকারি ভর্তুকিতে কৃষকদের সহায়তা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে সরবরাহ করা হয় আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র। তবে সেই যন্ত্র কৃষকদের আশীর্বাদ না হয়ে হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় হারভেস্টার মালিক ও কৃষকরা এখন হতাশা আর ক্ষতির মধ্যে দিন পার করছেন।
জানা গেছে, সরকারের খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় বিতরণ করা ৬৩২টি হারভেস্টারের অর্ধেকের বেশি এখন বিকল হয়ে পড়ে আছে। সময়মতো মেরামত না হওয়ায় সেগুলো ধান কাটার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মালিকরা, তেমনি মাঠের ধান কাটতে না পারায় সমস্যায় পড়েছেন হাজারো কৃষক।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের হারভেস্টার মালিক হাবিবুর রহমান মুক্তা জানান, “২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের হারভেস্টার কিনি। সাড়ে ৪ লাখ টাকা জমা দিই, বাকি টাকা কিস্তিতে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম মৌসুমেই মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। ধান কাটতে পারিনি, কিস্তিও দিতে পারছি না।”
লাখাই উপজেলার ইউপি সদস্য ছায়েদ আলী জানান, “২০২১ সালে মেশিন পেলেও সেটা প্রথম মৌসুমেই বিকল হয়। কোম্পানিকে জানানো হলেও তারা মেরামতের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান মাধবপুর, বাহুবল, নবীগঞ্জসহ প্রায় সব উপজেলার হারভেস্টার মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এমন অজুহাতে কৃষি বিভাগ কোনো সহায়তা দিচ্ছে না। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও মিলছে না তেমন সাড়া। ফলে মেশিন মেরামতের ভার এখন মালিকদের কাঁধে। অথচ প্রতিটি যন্ত্রের যন্ত্রাংশ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় তা অনেকেই মেরামত করতে পারছেন না।
কৃষকরা বলছেন, যন্ত্রের ওপর ভরসা করে শ্রমিক না নিয়ে ছিলেন, কিন্তু এখন সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারায় পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে, ফলন হারাচ্ছেন কৃষক।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দাবি করছে ভিন্ন চিত্র। তাদের তথ্যমতে, ৬৩২টি হারভেস্টারের মধ্যে বর্তমানে ৫২৮টি চালু রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে এসব মেশিন মাঠে ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তবে হবিগঞ্জ সদরে ১৭, মাধবপুরে ২, চুনারুঘাটে ১২, বাহুবলে ২৬, নবীগঞ্জে ২২, লাখাইয়ে ৭, বানিয়াচংয়ে ৬ ও আজমিরীগঞ্জে ১২টি মেশিন বিকল রয়েছে।
এদিকে ভর্তুকির টাকায় মেশিন কেনা হলেও ভোগান্তি এবং সঠিক তদারকির অভাবে কৃষক ও মালিক উভয়ের প্রত্যাশা ভেঙে পড়েছে। কৃষকেরা বলছেন, “উন্নয়ন প্রকল্পের নামে শুধু হিসাবের কাগজে উন্নয়ন হয়েছে, মাঠে বাস্তবতায় দুর্ভোগ ছাড়া কিছু মেলেনি।”
হারভেস্টার বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ তদারকি ও কোম্পানির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কার্যক্রম আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
×

Like us on Facebook

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.